ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বড় হচ্ছে ই-কমার্স ভিত্তিক লজিস্টিক্স ব্যবসা

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২১
বড় হচ্ছে ই-কমার্স ভিত্তিক লজিস্টিক্স ব্যবসা

ঢাকা: দেশের বাজারে ই-কমার্স ব্যবসার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বড় হচ্ছে ই-কমার্স ভিত্তিক লজিস্টিক্স ব্যবসা। ই-কমার্সে অর্ডার করা পণ্য গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ব্যাপক চাহিদা বাড়ছে এই খাতের।

ডাটা রিসার্চ বিডি নামক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসেব মতে, বর্তমানে বার্ষিক প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে লজিস্টিক্স খাতের।

দেশে পণ্য পরিবহন তথা লজিস্টিক্স খাতে সুন্দরবন, এস এ পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করে আসছে। তবে, ই-কমার্সের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ই-কমার্স বান্ধব লজিস্টিক্স সেবার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আর সেই প্রয়োজনীয়তা থেকেই দেশের বাজারে ধীরে ধীরে জায়গা করে করে নেওয়ার পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগও পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
ভারতের পেপারফ্লাই ভারতের বাইরে প্রথম কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশে। দেশীয় লজিস্টিক্স প্রতিষ্ঠান ই-কুরিয়ার ২০১৯ সালে হংকং ভিত্তিক লগ্নিকারী একটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ পেয়েছে। নিজেদের লজিস্টিক খাত আরও সম্প্রসারণ করার জন্য আলিবাবার কাছ থেকে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ পেয়েছে আরেক ইকমার্স মার্কেটপ্লেস দারাজ।  

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম চালডাল ডট কমের প্রধান নির্বাহী জিয়া আশরাফ বাংলানিউজকে বলেন, দেশে যখন ই-কমার্সের ব্যবসা বড় হতে শুরু করলো তখন গতানুগতিক লজিস্টিক্স প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছিলাম না। চালডালের কথা বললেই, ২০১৩ সালে যখন আমাদের যাত্রা শুরু হয় তখন নিজেদেরকেই ডেলিভারির ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। আমরা নিজেরা নিজেদের ডেলিভারি দিতে দিতেই লজিস্টিক্স উইং গড়ে উঠেছে- গো গো বাংলা। অন্য ইকমার্সগুলোও এমন করেছে। আবার বাজার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এই খাতে এসেছে যেমন ই-কুরিয়ার, রেডেক্স, পেপারফ্লাই ইত্যাদি। আবার রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলোও এই খাতে এসেছে যেমন পাঠাও, উবার নিয়ে এসেছে ‘উবার কানেক্ট’ ইত্যাদি।

গতানুগতিক লজিস্টিক্স প্ল্যাটফর্মের তুলনায় ই-লজিস্টিক্স খাতের প্ল্যাটফর্মগুলো অধিক প্রযুক্তি এবং ই-কমার্স বান্ধব বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা। জিয়া আশরাফ বলেন, সুন্দরবন, এস এ পরিবহন বা এই ধরনের ক্ল্যাসিকাল আরও যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদের থেকে ই-কমার্সের লজিস্টিক্সদের সঙ্গে কাজ করা অনেক বেশি সহজ। ই-লজিস্টিক্সগুলো খুব দ্রুত নতুন প্রযুক্তি বা সিস্টেম ধারণ করতে পারে। ফলে মার্চেন্ট এবং গ্রাহক উভয়েই লাভবান হন, ভালো সেবা পান। ফলে এই খাতে নতুন কোম্পানিগুলো তাদের জায়গা করে নিতে পারছে।  
জার্মানভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টার মতে, প্রতিবেশি দেশ ভারতে ই-লজিস্টিকসের বাজার প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের। আর বাংলাদেশে এই বাজার বর্তমানে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার।  

ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ইভ্যালির লজিস্টিক্স উইং ই-লজিস্টিক্সের প্রধান এবং ইভ্যালির সিনিয়র ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ডাটা রিসার্চ বিডি’র হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালেই দেশে এই খাতের বাজার ছিল প্রায় এক দশমিক ছয় (১.৬) বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে যে এটা কমপক্ষে দুই বিলিয়ন সেটা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে। ২০২৩ সাল নাগাদ এটা তিন দশমিক এক (৩.১) বিলিয়ন ডলারের বাজারে পরিণত হবে। এই খাতে প্রায় ১০ হাজার কর্মী স্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করছেন। ২০২২ সাল নাগাদ ফুল টাইম, পার্ট টাইম এবং ফ্রিল্যান্সার মিলিয়ে এই খাতে প্রায় ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।

এই খাতের প্রসারের উদাহরণ তুলে ধরে জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, গত বছরের ৮ এপ্রিল ই-লজিস্টিক্স যখন শুরু হয় তখন প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার পণ্য ডেলিভারি হতো। এখন প্রতিদিন গ্রোসারি, ফুড এবং ফার্মাসিউটিক্যাল মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার পণ্য ডেলিভারি হচ্ছে। লকডাউনের মতো পরিস্থিতিতে এটা আরও বাড়বে।  

ই-কুরিয়ারের প্রধান নির্বাহী বিপ্লব ঘোষ রাহুল বলেন, গত বছর করোনার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার ডেলিভারি থাকতো আমাদের। করোনার সময় জুন মাসে সেটি আট হাজারে উন্নীত হয়। ২০১৪ সালে ই-কুরিয়ারের প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৬ পণ্য ডেলিভারি করেছি আমরা। বর্তমানে আমরা প্রতি মাসে প্রায় তিন লাখ পণ্য ডেলিভারি করছি।

বর্তমানে মানুষের চলাচলে আবারও কঠোরতা আরোপ করায় ই-লজিস্টিক্স খাতের চাহিদা আরও বাড়বে। আর তার জন্য এই খাত প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। চালডালের প্রধান নির্বাহী জিয়া আশরাফ বাংলানিউজকে বলেন, চলাচলে কঠোরতা, মার্কেট শপিংমল বন্ধ বা লকডাউনের মতো সময়ে ডেলিভারির চাহিদা আরও বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন সবগুলো ই-লজিস্টিক্স পার্টনাররা মিলে কমপক্ষে এক লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ পণ্য ডেলিভারি করছে। বর্তমান সময়ের মতো পরিস্থিতির জন্য আমরা আমাদের কর্মীদের প্রস্তুত করছি। নতুন নতুন কর্মী নিয়োগ দিচ্ছি, তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তারা যেন সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য সরবরাহ করতে পারে তার জন্য কাজ করছি। চালডালে আমরা তাদেরকে বলি ‘গ্রাহক সেবা প্রতিনিধি’। করোনার এই সময়ে তারা নিজেরাও কিন্তু সম্মুখ যোদ্ধা। সবাই কিন্তু শুধু টাকার জন্য চাকরি করছে না এখানে। মানবিক দিক থেকেও চাকরি করছে। কোন গ্রাহক হয়তো বলছেন তিনি করোনা আক্রান্ত তবুও তার পণ্যটি তার দরজার গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি আমরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২১
এসএইচএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।