চাঁদপুর: পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে হাতে ভাজা মুড়ির গ্রাম খ্যাত চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের উচ্চঙ্গা গ্রামের বাসিন্দারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সারা বছর তারা এ কাজ করলেও এ সময়ে প্রায় সব বাড়িতেই মুড়ি ভাজার ধুম পড়ে যায়।
চিকিৎসকরাও পরামর্শ দিয়েছেন যতদুর সম্ভব কেমিক্যাল মেশানো মেশিনের তৈরি মুড়ি না খেতে।
উচ্চঙ্গা গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৫ যুগের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে মুড়ি ভেজে জীবন ধারণ করে আসছেন এই গ্রামের অর্ধশতাধিক সনাতন ধর্মের পরিবার। কারণ তাদের পূর্ব পুরুষরাও এই পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। আগে এদের সংখ্যা আরো বেশি থাকলেও প্রযুক্তির ব্যবহারসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন ওই গ্রামের অনেকে। মেশিনের তৈরি মুড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারা এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তারা।
স্থানীয় ধান ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ১১শ থেকে ১২শ টাকা দরে এক মণ ধান কিনে এর থেকে মুড়ি উৎপাদন হয় ২৩ থেকে ২৫ কেজি। আর এক মণ ধানের মুড়িতে আয় হয় ৫শ থেকে ৬শ টাকা। একটি পরিবার দিনে এক মণ ধানের মুড়ি ভাজতে পারে। তবে এসব মুড়িতে স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটে না।
চাঁদপুর শহরের মুড়ি ব্যবসায়ী হাসেম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, হাতে ভাজা স্বাস্থ্যসম্মত মুড়ির চেয়ে মেশিনের তৈরি মুড়ি দাম প্রায় অর্ধেক কম হওয়ায় বাজার দখলে নিয়েছে কেমিক্যাল মেশানো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মুড়ি। তাই দিন রাত শ্রম দিয়েও উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না এই মুড়ি তৈরি কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা। বাজারে বর্তমানে হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। আর মেশিনের তৈরি চিকন মুড়ি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে।
উচ্চঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা শিখা রানী বাংলানিউজকে বলেন, তিনি প্রায় ৪০ বছর হয়ে গেছে মুড়ি ভাজার কাজ করছেন। এই গ্রামে যখন তার বিয়ে হয় তখন থেকেই অনেক পরিবারকে এই পেশায় দেখেছেন। সারা বছর মুড়ির চাহিদা থাকে না। রমজান এলেই রাত ২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মুড়ি ভাজার কাজ করেন।
একই বাড়ির খোকন পাল বাংলানিউজকে বলেন, পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই পেশায় এখনও কাজ করছেন তিনি। কিন্তু বছরের সব সময় চাহিদা থাকে না এ কাজের। তবে তাদের হাতে ভাজা মুড়ি খুবই স্বাস্থ্যসম্মত, কোনো ধরনের ক্যামিকেল না থাকায় মুড়িগুলো অনেকদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
তিনি বলেন, আমাদের এই মুড়ি ভাজার কাজটি টিকিয়ে রাখার জন্য কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা পাওয়া যায় না। যতটুকু সম্ভব টাকা বিনিয়োগ করে নিজেদেরই ধান ও চাল সংগ্রহ করতে হয়। আমাদের নগদ টাকা কম। এ কারণে অনেকে সংসার চালাতে না পেরে অন্য পেশায় জড়িত হচ্ছেন।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, কেমিক্যাল কিংবা ফরমালিন বাজারের অনেক খাবারের সঙ্গে রয়েছে। এর মধ্যে অনেক এলাকায় মেশিনে ভাজা মুড়ির চাহিদা বেশি, দামও কম। গ্রামে এক সময় ঘরে ঘুরে মুড়ি ভেজে খাওয়ার প্রচলন থাকলেও তা এখন নেই। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মুড়ি পাওয়া যায়। তবে পরামর্শ থাকবে মেশিনে ভাজা মুড়ি না খাওয়ার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২১
আরএ