ঢাকা: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের সময় শিল্প কারখানাগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান।
সোমবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে ক্লিনিক ভবনে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়া শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, আমরা প্রত্যেকেই জানি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের প্রচণ্ডভাবে আঘাত করেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাতে শিল্প কলকারখানা চালু রাখতে পারি এবং শিল্প এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সব প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দেশ ও জাতির স্বার্থেই শিল্পকারখানাগুলো খোলা রাখা হবে।
তিনি বলেন, যদি কলকারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শ্রমিকরা সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে। এরফলে করোনা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে যে ১৮ দফা বিধি নিষেধ দিয়েছে সেখানে কল কারখানা বিশেষ করে গার্সেন্টস শিল্প খোলা থাকবে। এতে আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। যাতে বিদেশি বায়ারসরা আমাদের দেশে আসেন এবং তারা বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করে নিয়ে যান। সুতরাং আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী চমৎকার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আমরা স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় করে কাজে মনোনিবেশ করবো।
নির্দেশনায় আছে শিল্প কারখানার মালিকরা নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় শ্রমিকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করবে সেটা কতোটা সম্ভব জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, এটা সম্ভব।
গতবছরের ৮ মার্চ থেকে আমাদের দেশের করোনা ভাইরাসের আক্রমণ শুরু হয়। তখনও শ্রমিকদের বেতন যাতায়াতে বিশেষ ব্যবস্থা ও নজর রাখা হয়েছে।
আগেতো গার্মেন্টস মালিকরা আপনাদের নির্দেশনা মানেননি। সে সময় অনেক শ্রমিককে হেঁটে শিল্প প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়েছে, এবার যদি না মানে তাহলে আপনারা কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, শিল্প মালিকরা সরকারের এ সিদ্ধান্ত মানবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। মালিকরা নিজেদের যেমন রক্ষা করেন, এর সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদেরও রক্ষা করার চেষ্টা করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। যদি না মানে তাহলে আমরা অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আমাদের শ্রম আইনানুয়ী শাস্তি ও জরিমানারও বিধান রয়েছে।
এবিষয়টি কীভাবে মনিটরিং করবেন জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, এ বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য ইতোমধ্যে সারা দেশের জন্য ২৩টি মনিটরিং টিম করা হয়েছে। যারা ২০২০ সালের মার্চ থেকে কাজ করছে। যখন দেশে মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে তখন তাদের নতুন করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিতে সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান বলেন, গার্মেন্টর্স শিল্প একটি ব্যতিক্রমধর্মী। কারণ এ শিল্পের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। আর শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প হচ্ছে গার্মেন্টস। যেসব প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার বড় সহায়ক। একারণেই আমাদের এ প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, লেনদেনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থমন্ত্রীকে বলা আছে। আমরা বলেছি যেখানে শিল্প কারখানা খোলা থাকবে তারা যেন সরকারি নির্দেশনা মেনে কষ্ট হলেও শিফট করে কারখানা চালু রাখে। যাতে শ্রমিক বা মালিক কারো অসুবিধা না হয়।
এর আগে সকালে করোনা সংক্রমণ রোধে ঘোষিত আগামী ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিল্প-কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২১
জিসিজি/আরআইএস