ঢাকা: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই শর্তসাপেক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা হয়েছে পুরান ঢাকার দোকানপাট ও বিপণিবিতান।
মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় দুই সপ্তাহ পর রোববার (২৫ এপ্রিল) ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিপণিবিতান ও দোকানপাট খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার।
রোববার সকালে সদরঘাট, ইসলামপুর, বংশাল, গুলিস্থান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই দোকান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দোকান খুলে ধোঁয়া মুছা করছে কর্মীরা। একইসঙ্গে কিছু স্থানে ফুটপাতের দোকানও খুলতে দেখা গেছে। ক্রেতাদেরও মার্কেটে ঘুরতে দেখা যায়। তবে মার্কেটের প্রবেশ মুখে দেখা গেছে মাস্ক না পড়লে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না নিরাপত্তা প্রহরী। একইসঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করতে দেখা যায়। এদিন সকাল থেকেই কাপড় থেকে শুরু করে জুতার দোকানসহ অন্যান্য সব রকমের দোকান খোলা ছিল।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, রমজানের এ সময়টা তাদের ব্যবসার মৌসুম। এ মাসে ব্যবসা করে তারা সারা বছর সংসার চালান। ঈদেরও আর বেশি দিন নেই। তাই এ সময়ে ব্যবসা করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান তারা।
সদরঘাট গ্রেটওয়াল মার্কেটের কসমেটিকস দোকানের মালিক নিজাম শেখ বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার সরকারের ঘোষণার পর শনিবার এসে দোকান পরিষ্কার করে গেছি। অনেকদিন বন্ধ ছিলো তাই রোববার সকাল ১০টার আগেই দোকান খুলেছি। আমরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দোকান খুলেছি। দোকানে ক্রেতা এলেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছি।
ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বেপারী বলেন, করোনার জন্য অনেক দিন বন্ধ ছিল দোকান। বৈশাখের বাজার ধরতে পারিনি। এখন যদি ঈদের বাজার ধরতে না পারি তাহলে পথে বসে যেতে হবে। দোকান-শপিংমল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
বংশাল স্যানিটারি দোকানের কর্মচারী শাহীন জানান, শুক্রবার মালিক ফোনে বলেছেন রোববার সকাল থেকে দোকান খোলা। তাই শনিবারই অনেক কষ্ট করে শরিয়তপুর থেকে ঢাকায় এসেছি।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় শাখার উপসচিব রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে দোকানপাট ও শপিংমল খোলার কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ব্যাপক সংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয় বিবেচনা করে রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্তসাপেক্ষে দোকানপাট-শপিংমল খোলা রাখা যাবে। বিধি প্রতিপালনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাজার বা সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় প্রকোপ কমাতে গত ৫ এপ্রিল চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। তবে সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক ইত্যাদি খোলার রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এর একদিন পরে রাস্তায় গণপরিবহনের সংকট দেখা দিলে ৭ এপ্রিল থেকে সিটি করপোরেশন এলাকা গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয় সরকার। পরে সর্বশেষ ১৪ এপ্রিল সকাল থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর বিধি-নিষেধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তা ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে রোববার থেকে শপিংমল-দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত হয়।
দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছরের ৮ মার্চ। এর ১০ দিন পর প্রথম মৃত্যু হয় করোনায়। সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেছে দেশব্যাপী। শনিবার পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজার ৯৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া দেশে মোট সাত লাখ ৪২ হাজার ৪০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২১
জিসিজি/ওএইচ/