ঢাকা: দেশে চলমান করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলায় কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমের আওতায় বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা চালাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০২০ সালের নিরিক্ষিত হিসাব বিবরণীর নিট মুনাফার ১ শতাংশ এবং ২০২১ সালের সিএসআরখাতের বাজেটে ইতোমধ্যে বরাদ্দকৃত অর্থের অতিরিক্ত হিসেবে বরাদ্দ করতে হবে।
সোমবার (২৬ এপ্রিল) এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণের হার পুনরায় বেড়েছে। করোনা সংক্রমণজনিত কারণে দারিদ্রহার বাড়ার ফলে বিপদগ্রস্ত, কর্মহীন দরিদ্র, ছিন্নমূল, দুঃস্থ, অসহায় জনগোষ্ঠীর নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীসহ চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ এবং কর্মহীন মানুষের জীবিকা নির্বাহে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে সামাজিক দায়বদ্ধতা পরিপালনের উদ্দেশ্যে তফসিলি ব্যাংকগুলোর ২০২১ সালের সিএসআর বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দের মাধ্যমে বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ব্যাংকগুলো ২০২০ সালের নিরীক্ষিত (হিসাব বিবরণী চূড়ান্ত না হওয়ার ক্ষেত্রে অনিরীক্ষিত) হিসাব অনুযায়ী যে পরিমাণ নিট মুনাফা অর্জন করেছে তার ১ (এক) শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ ২০২১ সালের সিএসআরখাতের বাজেটে ইতোমধ্যে বরাদ্দকৃত অর্থের অতিরিক্ত হিসেবে বরাদ্দ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্ব স্ব পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘটনোত্তর অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। বরাদ্দকৃত অতিরিক্ত অর্থ ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে ব্যয় করতে হবে। ঈঝজ খাতে বরাদ্দকৃত অতিরিক্ত অর্থ স্থানান্তর নিশ্চিত করে তা একই বছরের ১৫ মের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টকে অবহিত করতে হবে। অতিরিক্ত বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যাংকগুলো কর্তৃক ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরে সিএসআর খাতে বরাদ্দ/ব্যয়িত অর্থের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে।
বিশেষ সিএসআর বাজেট থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীসহ চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ এবং কর্মহীন মানুষের জীবিকা নির্বাহে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া ক্ষেত্রে
সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলোর বস্তিবাসী, ছিন্নমূল এবং করোনা সংক্রমণের কারণে সাময়িকভাবে বেকার হয়ে পড়া ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য ও বিভিন্ন জেলার হতদরিদ্র, সাময়িক কর্মহীন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যারা করোনাজনিত রোগ বিস্তারের কারণে স্বাভাবিক জীবন-জীবিকা নির্বাহে অসমর্থ্য বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ সিএসআর খাতে বরাদ্দের ৫০ শতাংশ অর্থ সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলো এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ জেলা/উপজেলা/ ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যয় করতে হবে। উক্ত অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে তা যাতে কোনো বিশেষ এলাকায় কেন্দ্রীভুত না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের সহায়তায় অথবা শীর্ষ পর্যায়ের এনজিও/এমএফআইগুলোর মাধ্যমে অথবা উভয় প্রকারে প্রস্তাবিত বিশেষ ঈঝজ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাংকগুলো কর্তৃক এতদ্বিষয়ে পৃথক হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে। জেলা প্রশাসকের সহায়তায় আলোচ্য ঈঝজ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক এর কার্যালয়ের অনুকূলে পরিচালিত হিসাব এবং এনজিও/এমএফআই’র মাধ্যমে পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এনজিও/এমএফআই’র নামে রক্ষিত হিসাবে টাকা জমা/স্থানান্তর করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রদত্ত টাকার পরিমাণ, উপকারভোগীর সংখ্যা, সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলা/ইউনিয়নের নামসহ বিস্তারিত তথ্যাদি ব্যাংক কর্তৃক সংরক্ষণ করতে হবে।
বিশেষ সিএসআরের আওতায় বর্ণিত কার্যক্রমটি যথাসময়ে ও যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) সমন্বয়ক ও সহায়তাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও শীর্ষ পর্যায়ের এনজিও/এমএফআইগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এবিবির সহায়তা গ্রহণ করবে এবং এবিবি সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। বর্ণিত বিশেষ সিএসআর সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে এতদসংক্রান্ত বাস্তাবায়ন প্রতিবেদন চলতি বছরের ৩০ জুলাইর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপকের কাছে দাখিল করতে হবে।
এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২১
এসই/আরআইএস