ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

অনলাইনে বাড়ছে বাইক-গাড়ির মতো পণ্যের বিক্রি

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২১
অনলাইনে বাড়ছে বাইক-গাড়ির মতো পণ্যের বিক্রি

ঢাকা: অনলাইন ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোতে বাড়ছে মোটরসাইকেল ও গাড়ির মতো বিলাসবহুল পণ্যের বিক্রি। করোনাকালীন লকডাউনের মতো পরিস্থিতিতে বিপণিবিতাণগুলো বন্ধ থাকলেও ই-কমার্স খাতের কল্যাণে বিক্রি বেড়েছে এসব পণ্যের।

অনেক প্ল্যাটফর্মের গ্রাহক বান্ধব অফারের কারণে নাগালের মধ্যেই গ্রাহকেরাও কিনতে পারছেন এসব পণ্য। ফলে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, বাইক ও গাড়ি বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান এবং গ্রাহকসহ সব পক্ষই লাভবান হচ্ছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ সালের দিকে দেশীয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম পিকাবু ডট কম হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল অনলাইনে বিক্রি করে বেশ আলোড়ন তৈরি করে। বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে মূল্য পরিশোধ করলে মাসিক কিস্তিতেও বাইক কেনার সুযোগ দেয় প্ল্যাটফর্মটি। ফলে অনেকেই ই-কমার্সের মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে বাইক কিনতে শুরু করেন।

পরবর্তীতে চীনভিত্তিক আলিবাবার মালিকানাধীন ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস দারাজ ডট কম ডট বিডি’তেও মোটরবাইক বিক্রি শুরু হয়। তবে গ্রাহকবান্ধব নানান অফারের মাধ্যমে ই-কমার্সের মাধ্যমে মোটরসাইকেল ও গাড়ি বিক্রির ধারণা অন্য এক মাত্রায় নিয়ে যায় দেশীয় ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি ডট কম লিমিটেড।

বাজারমূল্য থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মূল্যছাড়ে বাইক বিক্রি শুরু করে প্ল্যাটফর্মটি। এরপর এতে যুক্ত হয় মোটর গাড়িও। সম্প্রতি প্রায় একই ধাঁচে বাইক বিক্রি শুরু করে আরও কিছু ই-কমার্স যেমন ধামাকাশপিং, আলিশামার্ট ইত্যাদি।

এমন প্ল্যাটফর্ম থেকে বাইক কেনা একটি পরিবহন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নুরে আলম বলেন, পড়াশোনা শেষ করে যখন প্রথম চাকরিতে প্রবেশ করি তখন যাতায়াতের জন্য একটি বাইক খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ে পছন্দের বাইকটি বাজারমূল্যে কেনার অবস্থা ছিল না আমার। তখন ইভ্যালি’তে হিরো বাইকের ওপর অফার দেখে আগ্রহ জাগে। প্রথমে একটু দ্বিধায় ছিলাম যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অগ্রিম এতগুলো টাকা দিয়ে আসলেই বাইক পাবো কিনা। যাই হোক, পরবর্তীতে হিরো হাংক বাইকের ডেলিভারি পেয়েছি।

২০২০ সালে করোনার প্রকোপ দেখা দিলে লকডাউন আরোপ করা হয়। সেসময় দোকানপাট ও বিপণিবিতান বন্ধ হয়ে গেলে অন্য সব খাতের মতো এই খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। বিশেষ করে বিভিন্ন কোম্পানির ডিলাররা বিপাকে পড়েন। তবে, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেই ক্ষতি অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন বলে মতামত তাদের।

বাংলাদেশে উত্তরা মটরসের আমদানি করা ভারতীয় বাজাজ ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের ডিলার এস কে ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী আল মামুন বলেন, আমরা বছরে পাঁচ থেকে ১০ হাজার বাইক বিক্রি করি। কিন্তু করোনার কারণে সব থেমে গিয়েছিল। প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার লোকসানের সম্মুখীন হতে যাচ্ছিল এই খাত। পরবর্তীতে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর কারণে বিশেষ করে ইভ্যালির কারণে আমরা সেই ক্ষতি অনেকখানিই পুষিয়ে নিয়েছি। ই-কমার্সের কারণে এখন আমাদের বাইক বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বাইক এখন একটি অতি প্রয়োজনীয় বাহন। কারণ এতে চলাচল করলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত হয় এবং সাশ্রয়ী। বিশেষ করে নারীরাও এখন বাইক ও স্কুটি কিনছেন এবং সেগুলোতে চলাচল করছেন।

ডিলারদের মতোই আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন বাইক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও। ভারতের জনপ্রিয় মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড হিরো বাংলাদেশে উৎপাদন ও বাজারজাত করে নিলয় মটরস।

প্রতিষ্ঠানটির কর্পোরেট কী একাউন্ট ম্যানেজার তানভীর আদনান বলেন, শুরুর দিকে পিকাবুর মাধ্যমে আমরা অনলাইনে বাইক বিক্রি শুরু করি। তবে, ২০১৯ সালের শেষ এবং ২০২০ সালের শুরুর দিকে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো গ্রাহকদের জন্য বাইকের ওপর আকর্ষণীয় অফার দেওয়া শুরু করলে ই-কমার্সে আমাদের বাইক বিক্রি বহুগুণে বেড়ে যায়। নিলয় মটরস থেকে হিরো ব্র্যান্ডের যতো বাইক বিক্রি হয় তার প্রায় ৩০ শতাংশই এখন ই-কমার্সের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে।

বাইক ও গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে সাড়া জাগানো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বাইক বিভাগের সমন্বয়ক ও অপারেশন ম্যানেজার খলিলুর রহমান সাকিব বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যদি বাইকের অথবা দুই চাকা বিশিষ্ট যানবাহনের দিকে বাজার তুলনা করি তাহলে দেখব যে, ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাইকই এখন ই-কমার্সের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় মাসিক ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা। এটা দিন দিন আরও বাড়ছে। ইভ্যালির কথাই যদি বলি, মাসে গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার ইউনিট বাইক এখন আমরা বিক্রি করছি। করোনার আগের সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাইক বিক্রি বেড়েছে।

এ বিষয়ে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ইভ্যালি শুরু থেকেই চেষ্টা করেছে সাধারণ ভোক্তা শ্রেণীর স্বপ্ন পূরণ করতে। সেই লক্ষ্য থেকে বাইক ও গাড়ির মতো বিলাসবহুল পণ্য আমরা আকর্ষণীয় অফারে ইভ্যালিতে বিক্রি শুরু করছি। এখন দুই চাকার বাইক ও চার চাকার ব্যক্তিগত গাড়ি অনেকের নাগালের মধ্যেই চলে এসেছে। আমরা বাইকের পাশাপাশি নিয়মিত টয়োটা, হোন্ডা, পিএচপির সাগা এর মতো গাড়ি বিক্রি করছি। আমাদের আগে থেকেই বাইকের জন্য একটি ওয়্যারহাউজ ছিল এবং সম্প্রতি আমরা আরও একটি নতুন ওয়্যারহাউজ চালু করেছি যেখান থেকে গ্রাহকদের বাইক ডেলিভারি করা হচ্ছে। আমরা এই খাতের আরও সম্ভাবনা দেখি যার মাধ্যমে গ্রাহক, ডিলার এবং বাইকের মাদার কোম্পানি সবাই উপকৃত হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২১
এসএইচএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।