ঢাকা: করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। লকডাউনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে।
রোববার (২ মে) একাধিক দর্জি ব্যবসায়ী বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এমনটি জানিয়েছেন।
দর্জি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর রমজান মাস এলেই আমাদের একটি টার্গেট থাকে। রমজানে ব্যবসা করে সারা বছর কর্মচারীদের নিয়ে ভালোভাবে যাতে দিন কাটাতে পারি। সেরকম একটি লক্ষ্য থাকে আমাদের। কিন্তু গত বছর থেকে করোনার কারণে সব ভেস্তে গেছে। বউ-বাচ্চা নিয়ে বেঁচে থাকাটাই এখন কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে পশ্চিম শেওড়া পাড়ার চন্দ্রিমা টেইলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী নাসির বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর শবে বরাতের পর থেকে দোকানে কাস্টমারের ভিড়ে হিমশিম খেতে হয়। কর্মচারীদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করি পুরো রমজান মাসজুড়ে। অথচ এবার কাজ নেই দুইজন কর্মচারী, দোকান ভাড়া, বাসা ভাড়া ও সংসার খরচ কিভাবে দেবো বুঝতে পারছি না। সবমিলিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে ঢাকা শহরে বাঁচাটাই দায় হয়ে যাবে।
লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকায় কাজে ফিরতে পারছেন না রাজধানীর একটি টেইলারিং দোকানের কর্মচারী মো. কবির হোসেন।
তিনি মোবাইলফোনে বাংলানিউজকে বলেন, লকডাউনের আগে বরিশাল এসেছিলাম ভেবে ছিলাম সাতদিন থেকে চলে আসবো কিন্তু এখানে এসে আটকে গেছি। মালিকও ফোন দিচ্ছে কিন্তু ঢাকায় ফিরতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রডাকশনে কাজ করি। তাই কাজ না করলে টাকাও নেই। দারুণ কষ্টে আমাদের মতো প্রডাকশন কর্মীদের দিন কাটছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রতিবছর ৮ রমজানের মধ্যেই পোশাকের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিতাম। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা কারখানায় পাঁচজন কর্মচারী পোশাক তৈরি করতো। অথচ গত বছর থেকে করোনা ও লকডাউনে একেবারেই ব্যবসা নেই বলে জানালেন শেওড়াপাড়ার গোল্ড স্টার টেইলার্সের মালিক মো. ওয়াসিম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে আমাদের দিন কাটছে। জমানো কিছু টাকা ছিল সেটিও শেষ হয়ে গেছে। দোকান ভাড়া কারখানা ভাড়া ও বাসা ভাড়া জমে যাচ্ছে। এগুলো কিভাবে পরিশোধ করব বুঝতে পারছি না। প্রতিবছর রমজান মাসে যে ইনকাম হয় সেটা দিয়ে সারাবছর চলে যায়। অথচ গতবছর থেকে কষ্টে দিন কাটছে। অর্ডার আগের মতো নেই মানুষ রেডিমেট আইটেমের দিকে বেশি ঝুঁকছে। কাস্টমার ঝুঁকি নিচ্ছে না। এছাড়া আমার দূরের কাস্টমাররা লকডাউনের কারণে আসতে পারেনি। সব মিলিয়ে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, শুধু আমিই নই আমার এখানে পাঁচ জন কর্মচারী প্রডাকশনে কাজ করে। তারাও চরম দুর্দিনে রয়েছেন। প্রোডাকশন কমে যাওয়ায় তাদের সংসার চলতে কষ্ট হচ্ছে।
স্কুল ও কলেজের ড্রেস তৈরি করে সারাবছর চলে আমার। সব স্কুল বন্ধ রয়েছে। জানি না এ অবস্থায় সামনের দিনগুলো কিভাবে বেঁচে থাকবো বলে জানালেন পশ্চিম শেওড়াপাড়া মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থানরত শাপলা টেইলার্সের মালিক মনোয়ার হোসেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শেওড়াপাড়ায় আমার দুইটি দোকান এবং একটি কারখানা আছে। এখানে ভাড়া বাবদ ৪০ হাজার টাকা প্রতি মাসে আমার পরিশোধ করতে হয়। কারখানায় আটজন কর্মচারীর মধ্যে ছয় জন প্রোডাকশনে কাজ করলেও দুইজনকে প্রতি মাসে ২২ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। এরপর আমার নিজের সংসার ও রয়েছে। গত এক বছরের বেশি দোকান ভাড়া জমে গেছে সামনের দিনগুলো যদি এভাবেই কাটে তাহলে মরা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
তিনি আরো বলেন, আমার মূল ব্যবসাটাই স্কুল নির্ভর। স্কুল বন্ধ থাকলে আমার ব্যবসা বন্ধ থাকে। তাই এই অবস্থায় কোনো কুল দেখছি না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে ৫ এপ্রিল থেকে চরম দুর্দিন কাটাচ্ছেন এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের একটিই দাবি মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও দোকান ভাড়া কিছুটা মওকুফে বাড়ির মালিকরা সহনশীল হবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২১
এসএমএকে/এএটি