ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রথমবারের মতো সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ যাচ্ছে বিদেশে  

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৭ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২১
প্রথমবারের মতো সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ যাচ্ছে বিদেশে  

সাতক্ষীরা: দেশের প্রথম স্থানীয় জাত হিসেবে সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ আম যাচ্ছে জার্মানিতে। সচরাচর হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি জাতের আম রপ্তানি হলেও এবারই প্রথম রপ্তানির তালিকায় উঠলো সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ আম।

মাটি ও আবহাওয়াজনিত কারণে অন্য জেলার তুলনায় সাতক্ষীরার আম আগে পাকায় এবং স্বাদে, গুণে ও মানে অনন্য হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরেই সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি আম রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।

গত মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে রপ্তানি বিঘ্নিত হলেও কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় এবং বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ ও সলিডারিডাড’র সহযোগিতায় চলতি মৌসুমে আবারও রপ্তানি শুরু হয়েছে সাতক্ষীরার আম।

শনিবার (৮ মে) সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেরেলকাতা ইউনিয়নের পুটুনি এলাকার চাষি দাউদ মোল্লার বাগানের গোবিন্দভোগ আম পেড়ে প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে চলতি মৌসুমে বিদেশে আম রপ্তানি কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই কার্যক্রমে উদ্বোধন করেন। এসময় উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম, উত্তরণ’র সফল প্রকল্পের ম্যানেজার ইকবাল হোসেন, সলিডারিডাড’র সাপ্লাই চেইন প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, উত্তরণ’র সাপ্লাই চেইন অফিসার শহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কৃষি বিভাগ জানায়, অন্য জেলার তুলনায় ১৫-২০ দিন আগে সাতক্ষীরার আম পেকে যায়। তাই রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে রপ্তানি বাজারে বিশেষ গুরুত্ব পায় সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি আম। এ বছর থেকে এই তালিকায় গোবিন্দভোগ আম যুক্ত হলো। এছাড়া সারাদেশেও রয়েছে সাতক্ষীরার আমের বিপুল চাহিদা।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ১৩ হাজার ১০০ জন চাষি ৫ হাজারেরও বেশি বাগানে আম চাষ করেন। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা থেকে অন্তত ৫০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হবে জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের বাজারে।

আম চাষি ডাবলু বাংলানিউজকে জানান, আম রপ্তানির জন্য তারা মৌসুমের শুরু থেকেই বাগান পরিচর্চা শুরু করেছেন। ডাল ছাটা, ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা দমনসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আম উৎপাদন করা হয়েছে। এখন ন্যায্য মূল্যে পেলেই তারা খুশি।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বিদেশে আম রপ্তানির জন্য মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে জৈব পদ্ধতিতে বাগান পরিচর্যা শুরু করেন চাষিরা। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা থেকে নিরাপদ ও বিষমুক্ত গোবিন্দভোগ আম হার্ভেস্টিং ও রপ্তানি শুরু হয়েছে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমের শুরুতে রপ্তানির লক্ষে জেলার কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর, তালা, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলার ৩৫০ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এসব চাষি পরিবেশ সম্মত উপায়ে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করেছেন। বাশার অ্যাগ্রো, ইসলাম গ্রুপ, গ্লোব ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, আর আর এন্টারপ্রাইজসহ ১৪টি কোম্পানির মাধ্যমে সাতক্ষীরার আম বিদেশে রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা থেকে অন্তত ৫০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার মুম্বাই, গোবিন্দভোগ, গোপালভোগসহ আগামজাত আম ১ মে, হিমসাগর আম ২১ মে ও ল্যাংড়া আম ১ জুন থেকে হার্ভেস্টিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের চেয়ে অন্তত ১৫ দিন আগে হার্ভেস্টিংয়ের সুবিধা থাকায় সাতক্ষীরার আম রপ্তানিতে বিশেষ গুরুত্ব পায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।