খুলনা: করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় খুলনার পার্লারগুলোতে নেই সৌন্দর্য পিপাসুদের ভিড়। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে গত বছরের ন্যায় পার্লার ব্যবসা এবার জমে উঠেনি।
করোনার আঘাত হানার আগের সময়ের তুলনায় বর্তমানে পার্লারগুলোতে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে।
ঈদ এলে ফেসিয়াল, ভ্রু কিংবা চুল কাটা ছাড়াও বিভিন্ন কাজের জন্য ভিড় লেগে থাকতো পার্লারগুলোতে। পার্লারের কাজের পাশাপাশি অনুষ্ঠান বাড়িতে বিশেষ করে কনে সাজানো ও অন্যদের সাজিয়ে ভালো রোজগার হতো। কিন্তু এখন সেই ধরনের কোনো আয়োজন নেই। এবার যেন রূপ সচেতন সেই নারীদের আগ্রহে টান পড়েছে। নেই চুল রিবন্ডিং, ফেসিয়াল, মেনিকিউর, পেডিকিউর কিংবা চুল কাটার হিড়িক। করোনার আগের বছর গুলোতে ঈদ উপলক্ষে পার্লারগুলোতে নারীদের বেশ ভিড় থাকতো। এখন অনেক পার্লারই বন্ধ। যেগুলো খোলা রয়েছে সেগুলোও কাস্টমার শূন্য।
ফলে পার্লার কর্মীরা অনেকে অলস সময় পার করছেন। আবার অনেকের কর্ম হারিয়ে সংসার চলছে না। এমনকি তাদের সরকারি কোনো সাহায্যও মিলছে না ।
জানা যায়, খুলনায় প্রায় শতাধিক পার্লার রয়েছে। যেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে পেশা হিসেবে অনেকে বেছে নিয়েছেন পার্লারের কাজকে। অনেকের কাছে এটাই একমাত্র রোজগারের পথ।
পার্লার মালিকরা বলেন, প্রায় দুই বছর ধরেই লোকসান গুনছি। পার্লারের কাজ কমে গেলেও প্রতি মাসে পার্লারের ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। ঈদকে কেন্দ্র করেও নেই তেমন কোনো কাস্টমার। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। পার্লারে কাস্টমার নেই, পার্লার খরচও উঠছে না। করোনার কারণে পার্লারে কাস্টমার কম হলেও কর্মরতদের নিয়মিত বেতন দিতে হচ্ছে অনেককে।
মহানগরীর দৌলতপুর এলাকার বিউটিশিয়ান ওমেন্স মেকওভারে আসা বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মুসফিকা মিলা বলেন, করোনার জন্য অনেক দিন পার্লারে আসি না। ঈদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসেছি।
নাজ ইসলাম নামে পার্লারে আসা অপর এক গৃহিনী বলেন, এক সময় পার্লারে বুকিং পাওয়া যেতো না। এবার ভিন্নতা দেখলাম।
ফ্যাশন ডিজাইনার ও বিউটিশিয়ান ওমেন্স মেকওভারের মালিক তানিয়া সুলতানা তানি বাংলানিউজকে বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে টানা লোকসান গুনতে হচ্ছে। বিউটিশিয়ান ও দোকান ভাড়া দিতে হচ্ছে নিজের পকেট থেকে। এভাবেই চলছে বর্তমান পার্লার ব্যবসা।
তিনি জানান, কিছু নিয়মিত কাস্টমার ছাড়া ঈদ উপলক্ষে তেমন কোনো ভিড় নেই। ঈদের দিন ঘনিয়ে এলেও পার্লারগুলো অনেকটা কাস্টমার শূন্য। পার্লারের ভেতরে শুয়ে-বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন বিউটিশিয়ানরা। সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পেলে এ ব্যবসা গুটিয়ে নেবেন অনেকে।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালে সরকার অন্যান্য সব ব্যবসায়ীদের অনুদান দিয়েছে কিন্তু আমরা নারীরা যারা পার্লার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারা কোনো অনুদান পাইনি।
পিটিআই মোড়ের মালিহা বিউটি পার্লারের মালিক উম্মুর রেদা বলেন, করোনার ভয়ে সাজবিলাসী নারীদের আনাগোনা নেই পার্লারে। আমার কিছু রেগুলার কাস্টমার আছে। তারাই আসছেন। ঈদ উপলক্ষে কোনো ভিড় নেই।
মহানগরীর শামসুর রহমান এক্সক্লুসিভ কানিজ হেয়ার অ্যান্ড বিউটি পার্লারের মালিক ও নারী সংগঠক কানিজ সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পার্লার খোলা রাখা হয়েছে। করোনাকালে নেই বিয়ের আয়োজন। গণজমায়েত করে জন্মদিন বা কোনো জাঁকালো অনুষ্ঠানও হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় অনেক ক্রেতা পার্লারে আসছেই না। ঈদ উপলক্ষেও পার্লারে আগের মতো ভিড় নেই। করোনা ব্যাধি থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পার্লার ব্যবসা গতিশীল হবে না। ক্রেতা না থাকলে ব্যবসায় লোকসান হবে। অনেক নারী রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২১
এমআরএম/আরআইএস