ঢাকা: কোভিড-১৯ করোনা মহামারি মোকাবিলায় চলমান লকডাউনের মধ্যেও বিকিকিনি বেড়েছে দেশের মোবাইল ডিভাইস খাতে। ঈদ বাজারে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় বিক্রির ঊর্ধ্বমুখী গতি দেখছেন মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারক ও আমদানিকারকসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা।
দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারজাতকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে গত বছরের প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে মোবাইল বেচাকেনার হার ছিল বেশি। তবে এপ্রিল থেকে দেশে লকডাউন ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞায় এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। এর আগে করোনার কারণে ২০২০ সালের ঈদ উল ফিতরে বিক্রি হওয়া মোবাইলের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কম আর সেই ধারা অব্যাহত আছে এবারও। তবে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় এবং শপিং সেন্টার খুলে দেওয়ায় ঈদের আগে কিছুটা চাঙ্গা হয়েছে মোবাইল ফোনের বাজার।
বাংলাদেশে টেকনো, আইটেল ও ইনফিনিক্স ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন আমদানিকারক ট্রানশন বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ও মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ উল ফিতরে এই দেশে উদযাপিত অন্যতম বৃহৎ একটি আয়োজন। দুই ঈদের ব্যবসার দিকেই সারাবছর ব্যবসায়ীরা তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু গতবছরের করোনার পর থেকে ঈদেও বাজার খারাপ যাচ্ছে। এবারও ঈদের বাজার মন্দা যাচ্ছিলো তবে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে লকডাউন শিথিল করায় বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। রোজার ঠিক আগের মাসের সঙ্গে তুলনা করলে প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে ঈদকে কেন্দ্র করে রোজার মধ্যে।
বিশ্ব বাজারের মতোই দেশের বাজারে বছরের প্রথম প্রান্তিকে মোবাইল বিক্রির হার বেড়েছে বলে মনে করছে আরেক বহুজাতিক ব্র্যান্ড অপো। প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ অংশের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা তাসকিন আল আনাস বলেন, বিশ্ববাজারে ২০২০ সালের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে মোবাইল বিক্রির হার বেড়েছে। এই সময়ে মোট ৩৪৭ মিলিয়ন ইউনিট হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়েছে যার তুলনামূলক হার ২৭ শতাংশ। এর ছোঁয়া বাংলাদেশের বাজারেও পড়েছে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে অপো এর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬০ শতাংশ। দেশের বাজারে ঈদকে কেন্দ্র করে গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিতে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি যেমন যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের বিক্রয় কেন্দ্রগুলো চালু রেখেছি। ২৪ ঘণ্টা গ্রাহক সেবা কেন্দ্র থেকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও দারুণ কিছু অফারও রয়েছে গ্রাহকদের জন্য।
অফলাইন মার্কেটের পাশাপাশি অনলাইনেও ভালো বিক্রি হচ্ছে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। আর করোনার মতো সময়ে অফলাইনের তুলনায় ‘অনলাইন সেলস’ বেশ কার্যকর সমাধান হয়েও দেখা দিচ্ছে বলে মত তাদের।
জনপ্রিয় মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্র্যান্ড মটোরোলা এর ন্যাশনাল পার্টনার সেলেক্সট্রা শপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিব আরাফাত বলেন, সেলেক্সট্রা শপ বহুজাতিক ব্র্যান্ড মটোরোলার ন্যাশনাল পার্টনার হিসেবে দেশের বাজারে সক্রিয় রয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে এবং মহামারির সময়ে হ্যান্ডসেটের বাজারে বিক্রি কিছুটা কমলেও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে গ্রাহকের আগ্রহ দেখে আমরা বেশ আশাবাদী। অনলাইনে স্মার্টফোন অর্ডার করতে মানুষ এখন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। তাই লকডাউনের সময়েও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও মটোরোলার নতুন মডেলের স্মার্টফোনগুলো ভালো সাড়া পাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা পণ্য সম্পর্কে জানতে চাইছেন, তাদের চাহিদা মতো আমরাও পছন্দের হ্যান্ডসেটটি ঘরের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। চাহিদা এবং বিক্রির কথা বললে আমরা এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোও ঈদের বাজারে মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রিতে সন্তোষ প্রকাশ করছে। দেশের অন্যতম শীর্ষ ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি ডট কম ডট বিডির হেড অব বিজনেস সাজ্জাদ আলম বলেন, ই-কমার্সের মতো প্ল্যাটফর্মে যেসব পণ্য বিক্রি হয় তার মধ্যে অন্যতম শীর্ষে রয়েছে মোবাইল ফোন ও বিশেষ করে বললে স্মার্টফোন। এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত আমরা অনলাইনে দারুণ সেল পেয়েছি। এর ফলে করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন শপিং সেন্টার বন্ধ থাকলেও ই-কমার্সের মাধ্যমে বিশেষ করে ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসগুলোর মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য হারে হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়েছে। তবে বিশ্ব বাজারে বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের স্ক্রিন বা পর্দা এবং চিপসেটের কাটতি রয়েছে। ফলে হ্যান্ডসেটের প্রাপ্যতা নিয়ে একটু টানাটানি রয়েছে নইলে সেল আরও ভালো হতো।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৮ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২১
এসএইচএস/এমআরএ