ঢাকা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘরে বসে কোরবানির পশু কেনাটায় উৎসাহিত করতে দেশের ৬৪ জেলাকে সম্পৃক্ত করে ডিজিটাল হাট চালু করেছে সরকার।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও ই কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ই-ক্যাব) যৌথ উদ্যোগে এবং এটুআই এর কারিগরি সহায়তায় আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে অনলাইন হাটের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে আমাদের জনসমাগম থেকে দূরে থাকতে হবে। এজন্য ডিজিটাল ব্যবস্থাকে রপ্ত করতে হবে এবং সেটা কাজে লাগাতে হবে। সমগ্র বাংলাদেশ ডিজিটাল ব্যবস্থায় এগিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষও এখন ডিজিটাল ব্যবস্থায় যুক্ত হতে পারছে। এ বাস্তবতায় বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ডিজিটাল হাট সময়োপযোগী উদ্যোগ। এ বছর মোট কেরবানির পশুর ২৫ শতাংশ ডিজিটাল ব্যবস্থায় বিপণনে আমাদের লক্ষ্য রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা মূল্যের ১ লাখ ৫৭ হাজার গবাদিপশু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হয়েছে। এটি খুবই আশাব্যঞ্জক।
তিনি বলেন, সমৃদ্ধ আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা সবাই ভোগ করছে, এমনকি এক সময় এটা নিযে যারা বিদ্রুপ করতো তারাও এ সুবিধা ভোগ করছে। শেখ হাসিনার অনবদ্য সৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। সেই বাংলাদেশে করোনাকালে যদি ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা না হতো তাহলে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হতো।
মন্ত্রী বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩১ জন খামারিকে দুই ধাপে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। খামারিরা যাতে বিপর্যস্ত অবস্থায় না পড়ে সেজন্য খামারিদের সংগঠিত করে উৎপাদিত দুধ, ডিম, মাংস ভ্রাম্যমাণ বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যবস্থা অনেক সহায়তা করেছে।
করোনায় অনেক পশু অবিক্রিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, এ ক্ষেত্রে চাষি বা খামারিদের সহায়তা দেওয়া হবে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গবাদি পশু বিক্রি না হলে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সুযোগ নেই। করোনাকালে গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষি ও খামারিদের অনুদান, প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল হাটের প্ল্যা টফর্মে নিবন্ধন ছাড়াও অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। সেসব জায়গা থেকে গবাদি পশু কিনলে ক্রেতারা নিজ দায়িত্বে কিনবেন। তবে আমাদের এই প্ল্যাটফর্মে সম্পৃক্ত বা নিবন্ধিতদের কাছ থেকে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই। কারো কোনো ধরনের সমস্যা হলে তা প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সংযুক্ত থেকে বক্তব্য দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ এবং এটুআই-এর প্রকল্প প্ররিচালক ড. মো. আব্দুল মান্নান।
এটুআই এর যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্য দেন। ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার অনুষ্ঠানে ডিজিটাল হাটের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন, ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল ভিডিও উপস্থাপনের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন এবং এটুআই এর ই-কমার্স প্রধান রেজোয়ানুল হক জেমি ডিজিটাল হাটের বিষয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী সকল জেলা-উপজেলার কোরবানির পশু ক্রেতা-বিক্রেতাদের একই প্ল্যাটফর্মে আনার লক্ষ্য নিয়ে দেশব্যাপী ডিজিটাল হাট চালু করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও ই-ক্যাবের যৌথ উদ্যোগে এবং এটুআই এর কারিগরি সহায়তায় এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এর আওতায় www.digitalhaat.net প্ল্যাটফর্মে সারাদেশের ২৪১টি ডিজিটাল হাট যুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২১
জিসিজি/এমজেএফ