ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কাজী আলমগীরের স্বপ্ন শতভাগ ডিজিটাল ব্যাংকিং

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০১ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২১
কাজী আলমগীরের স্বপ্ন শতভাগ ডিজিটাল ব্যাংকিং

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে কন্ট্রাক্টলেস ব্যাংকিং তথা ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ধারণা সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বাংলাদেশও এতে পিছিয়ে নেই।

সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও কাজী আলমগীর বিডিবিএল-এ যোগদানের পরই কন্ট্রাক্টলেস ব্যাংকিং তথা ভার্চ্যুয়াল ব্যাংকিং চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিডিবিএলকে একটি আদর্শ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি ইতিমধ্যেই অনলাইন ব্যাংকিং সফটওয়ারটি যুগোপযোগীকরণ, ই-জিপি, অটোমেটেড চালান সিস্টেম, ই-নথি, ডিজিটাল হাজিরা ও ই-মামলা পরিচালন সফটওয়ার চালু করেছেন। এছাড়া বিডিবিএলের দেশব্যাপী উপশাখা চালু, ডেবিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপ চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

এক সাক্ষাৎকারে কাজী আলমগীর বলেন, পেপারলেস ব্যাংকিং ছিল আধুনিক ব্যাংকিংয়ের এক জনপ্রিয় ধারণা, যার ফলশ্রুতিতেই আজ বিশ্বব্যাপী ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড চালু ও জনপ্রিয় হয়েছে। এখন সময় এসেছে ভার্চ্যুয়াল বা স্মার্ট ব্যাংকিংয়ের। এখন আর অ্যাকাউন্ট খুলতে, লোন পেতে, টাকা উত্তোলনে, রেমিটেন্স পেতে মানুষকে ব্যাংকে আসতে হয় না।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং অটোমেশন ইতিহাসে ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন বেইজড আধুনিক ব্যাংকিং সেবা চালুকরণের একজন অন্যতম স্থপতি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও কাজী আলমগীর। ৯০ দশকের শেষের দিকে ডাটা এন্ট্রির জন্য যখন সরকারি ব্যাংকে কম্পিউটার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন অনেকেই চাকরি হারানোর ভয়ে এর বিরোধিতা করেন। সেই সময় অগ্রণী ব্যাংকে কম্পিউটার ব্যবহার শুরু করে সরকারি ব্যাংকে ডিজিটালাইজেশনের ফুটপ্রিন্ট স্থাপন করেন কাজী আলমগীর।

একজন মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও কেবল দূরদৃষ্টি আর ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা অনুধাবন করে কাজী আলমগীর সফটওয়ার প্রোগ্রামিংয়ে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। এই বিষয়ে পরবর্তীতে তিনি পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন-কম্পিউটার সায়েন্স, সার্টিফাইট পেমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রি সিকিুরিটি ইমপ্লিমেন্টার (সিপিআইএসআই), সার্টিফাইট ইনফরমেশন সিস্টেম অডিটর (সিআইসিএ), ইনফরমেশন সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট স্ট্যান্ডার্ড (আইসিএমএস) সহ ব্যাংকিং সফটওয়ার প্রোগামিং সংক্রান্ত সকল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

অগ্রণী ব্যাংকের সকল শাখায় যখন ব্যাংকের লেনদেনসহ সব কাজ ম্যানুয়ালি করা হতো, তখনই তিনি প্রথম অনুধাবন করেন যে ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে হলে শাখাগুলিকে বড় বড় ম্যানুয়াল লেজার বইয়ের পরিবর্তে ব্যাংকিং সফটওয়ার প্রচলন করে ব্যাংকিং লেনদেন সহজ ও স্বচ্ছতা আনতে হবে। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম অগ্রণী ব্যাংকের ৯টি কর্পোরেট শাখায় লেনদেন ও আনুসাঙ্গিক হিসাব ব্যাংকিং সফটওয়ারের মাধ্যমে পরিচালিত করার লক্ষ্যে আইবিএম মিনি কম্পিউটার (ঝ/৩৬, অঝ/৪০০) এর মাধ্যমে ‘অগ্রণী স্যলুশন’ নামে অনলাইন কোর ব্যাংকিং সফটওয়ার ডেভেলপ ও চালু করেন। এছাড়া হেড অফিসের পেরোল, রিকনসিলিয়েশন, আইন বিভাগের মামলা সংক্রান্ত কাজ, স্টেশনারি ও ফার্নিচারসহ অন্যান্য সেবা দ্রুত প্রদানের জন্য ইনহাউস সফটওয়ার ডেভেলপ ও বাস্তবায়ন করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় তিনি অগ্রণী ব্যাংকে বিভিন্ন সফটওয়্যার ডেভেলপের জন্য প্রোগ্রাম লেখা, সিস্টেম এনালিস্ট হিসেবে সিস্টেম এনালাইসিস অ্যান্ড ডিজাইনকরণ, অগ্রণী ব্যাংকের সার্বিক অটোমেশন তথা ব্যাংকের সকল (৯৩৫) শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং সফটওয়ার চালু করণ, সুইফট, এটিএম, এজেন্ট ব্যাংকিং, আরটিজিএস, ব্যাচ, বিএফটিএন বাস্তবায়নের নেতৃত্ব প্রদান করেন।

কেবল অগ্রণী ব্যাংকেই নয়, কর্মসংস্থান ব্যাংকের ডিএমডি হিসেবে ব্যাংকটিকে অটোমেটেড ব্যাংকে উন্নীত করেন। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) এর এমডি হিসেবে ব্যাংকটিতে ডাটা সেন্টার স্থাপন এবং অনলাইন সিবিএস বাস্তবায়ন করে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংকে রুপান্তর করেন। তার এই অকৃত্রিম ডিজিটাল বান্ধব পদক্ষেপের জন্য তিনি রাকাব বোর্ড কর্তৃক ‘অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স’ পুরস্কার লাভ করেন এবং অগ্রণী ব্যাংক পর্ষদ কর্তৃকও প্রশংসিত হন। এছাড়া তিনি ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রচারণা ও বাস্তবায়নের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ইউএসএ কর্তৃক ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড -২০২০’ পুরস্কার লাভ করেন।

তার সুদীর্ঘ ৩৩ বছরের ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে তিনি অগ্রণী ব্যাংক, রাকাব এবং কর্মসংস্থান ব্যাংকগুলোকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংকে রুপান্তর করতে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করে এখন  বিডিবিএলকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।  

কাজী আলমগীর বলেন, সাবেক বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক (বিএসবি) ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (বিএসআরএস) বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দুটি প্রতিষ্ঠান যা তিনি নিজে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই দুটি প্রতিষ্ঠানকে রুগ্ন অবস্থা থেকে রক্ষা করতে ২০১০ গড়ে তোলেন বিডিবিএল।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যার স্বপ্নের দুটি প্রতিষ্ঠান অবশ্যই বিশ্বমানের সেবা প্রদানে ব্রত থাকবে এবং বাংলাদেশকে একটি আদর্শ ডিজিটাল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ সফল করতে সচেষ্ঠ থাকবো ইনশাঅল্লাহ।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২১
এসই/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।