ঢাকা: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ঈদের দিন দুপুর থেকে ব্যবসায়ীরা কোরবানির চামড়া নিয়ে আসছে লালবাগের পোস্তায়। সেখানে আড়তদাররা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দুপুরের পর থেকেই চামড়া কেনা শুরু করেন।
বুধবার ( ২১ জুলাই) দুপুরে লালবাগের পোস্তায় গিয়ে দেখা যায়, লালবাগের পোস্তায় বিকেল ৩টার পর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির চামড়া আসতে থাকে।
আড়তদারদের হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠেছে লালবাগের শায়েস্তা খান, রাজ নারায়ণ ধর রোডসহ আশপাশের বিভিন্ন রোড। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন সারাদিন আড়তের কর্মচারীদের বসে গল্প করে সময় পার করতে হয়েছে। দিনে চামড়ার আমদানি কম থাকলেও সন্ধ্যার পর পর ঢাকা শহরের আশপাশের চামড়া আসতে শুরু করেছে।
পোস্তার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, বিকেল ৫টার পর থেকে চামড়া কেনাবেচা জমে ওঠে। গভীর রাত পর্যন্ত চামড়া সংগ্রহ করা হবে। এখানে চামড়া সংগ্রহের পর প্রথমে লবণজাত করা হবে। পরে তারা সাভারের ট্যানারিগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া
দেশের সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার আড়তে গতবারের মতো এবারো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ হবে না বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
এ বিষয়ে ছমির হানিফ অ্যান্ড সন্সের মালিক হাজী মো. ছমির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ৪৬ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করছি। এখন পোস্তায় আগের মতো আর চামড়া আসে না। অনেক চামড়া সরাসরি ট্যানারিতে চলে যায়। তাই মনে হচ্ছে আমদানি কম। এছাড়া গত দুই বছর ধরে কোরবানিও কম হচ্ছে। আজ দিনের বেলায় চামড়া কম আসলেও রাতে অনেক চামড়া এসেছে। কিন্তু চামড়া আসার গতি দেখে মনে হচ্ছে এ বছর গত বছরের তুলনায় কম চামড়া আসবে।
পোস্তার এস এম কামাল অ্যান্ড সন্স এর আনোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত দামেই লবণযুক্ত চামড়া কিনবো। তবে লবণ ছাড়া চামড়ার দাম ফুটে ৩/৪ টাকা কমে কিনছি। এ বছর আড়তে চামড়ার আমদানি কম। প্রথমতো করোনার জন্য কোরবানি কম হয়েছে, কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী বাজার নষ্ট করছে এবং ট্যানারি মালিকরা সরাসরি চামড়া কিনছেন। আমরা চামড়া কেনার জন্যই বসে আছি। চামড়া নিয়ে আসলে কেউ ফেরত যাবে না। সবাই ন্যায্য দাম পাবে। তবে অবশ্যই চামড়া গুনগতমান ঠিক থাকতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা শহর ও এর আশপাশের কোরবানির পশুর চামড়া পোস্তায় আসতে শুরু করেছে। দিনে কাঁচা চামড়া কম আসলেও রাতে আমদানি বেড়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর আমদানি কমেছে। কারণ কোরবানি কমেছে, জেলা পর্যায়ের ও ঢাকার আশপাশের চামড়াগুলো ৪৮ ঘণ্টার আগে ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি চামড়া কিনছে ট্যানারি মালিকরা। এছাড়া এ বছর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আনা গোনা কম। তবে মাদরাসা ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের বেশি দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক বছর চামড়ার লোকসান দিয়ে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী এ পেশা ছেড়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে লবণযুক্ত চামড়া ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ফুট ফড়িয়াদের কাছ থেকে কেনা হবে। এখন যে সব চামড়া আসছে সেটা লবণ ছাড়া সেজন্য এ চামড়ার দাম প্রতিফুট লবণযুক্ত চামড়া থেকে ৩ থেকে ৪ টাকা কমে ব্যবসায়ীরা কিনছেন। এবছর কোরবানি কম হওয়ায় আমাদের চামড়া সংগ্রহও কম হবে। এ বছর আমরা গরুর চামড়া ৪২ লাখ আর মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ২২ লাখ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি সংগ্রহ করতে পারবো।
এ বছর ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গত বছর যা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে গত বছর যা ছিলো ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা। গত বছর যা ছিলো ১৩ থেকে ১৫ টাকা। এক্ষেত্রে গত বছরের চেয়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকা, গত বছর যা ছিল ১০ থেকে ১২ টাকা।
ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, বছরে বাংলাদেশে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২১
জিসিজি/আরএ