ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের আম বাজার, ট্রেন বন্ধে হতাশ চাষিরা

এ কে এস রোকন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪১ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২১
জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের আম বাজার, ট্রেন বন্ধে হতাশ চাষিরা জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের আম বাজার। ছবি: বাংলানিউজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে আমের রাজধানী নামে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কানসাট ও রহনপুরের আম বাজারগুলো। দাম আশানুরূপ না হলেও মৌসুমের শেষ আম আশ্বিনায় তুলনামূলক দাম পাচ্ছেন চাষিরা।

 

করোনাকালীন সময়ে সরকার ঘোষিত সারাদেশে কঠোর বিধি-নিষেধ ঘোষণা থাকলেও আম বাজারগুলো এর আওতামুক্ত হওয়ায় বাজারে বেড়েছে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি।

প্রতিদিন ভোর থেকেই ভ্যানে সারি সারি আমের ডালি রহনপুরের ব্যস্ততম স্থান মাদরাসা মোড় থেকে পিএম আইডিয়াল কলেজ মাঠ (আম বাজার) পর্যন্ত লক্ষ্য করা গেছে।  

অন্যদিকে, পুকুরিয়া থেকে ধোবড়া পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত হয়ে পড়েছে জেলার বৃহত্তম কানসাটের আম বাজার। রাস্তায় বেড়েছে নিত্যদিনের মতো যানজটও। ফলে এ এলাকাগুলোতে ভোগান্তি বাড়লেও হাসিমুখে তা মেনে নিচ্ছেন স্থানীয়রা।  

এদিকে, গত ১৭ জুলাই থেকে ম্যাংগো ট্রেন আকস্মিক বন্ধ হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন আম ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ। আমের সিজন শেষ হওয়ার আগেই ট্রেনটি বন্ধ হওয়ায় এসব ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে।  

বর্তমানে আম বাজারে বিভিন্ন জেলা থেকে আম ব্যবসায়ীদের সমাগমও বেড়েছে। ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে ফজলি, আম্রপালি, বারি ৪ ও আশ্বিনা আম।

দাম সম্পর্কে রহনপুর আম আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি হুমায়ন কবির বাবু বাংলানিউজকে বলেন, ফজলি ৪-৫ হাজার, আম্রপালি সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৫ হাজার, বারি-৪ সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার, আশ্বিনা ৮শ থেকে ১৫শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৪০-৫০টি ছোট-বড় ট্রাকে করে এ আম দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।

এদিকে, কানসাট আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বাংলানিউজকে বলেন, কানসাটের বাজারে মূলত এখন ফজলি ও আশ্বিনার সমারোহ বেশি। তবে সীমিত পরিসরে আম্রপালি ও বারি-৪ পাওয়া যাচ্ছে। ফজলির সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় দাম বেশি হলেও গত বছরের চেয়ে কম। বর্তমানে প্রতি মণ ফজলি রকম ভেদে সর্বনিম্ন ৪-৬ হাজার টাকা দরে এবং আশ্বিনা ৯শ থেকে রকম ভেদে ১৬শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।  

ওমর ফারুক টিপু আরও বলেন, বাজারে ফ্রুট ব্যাগিং আমের দাম একটু চড়া। তবে এ বছর আমের দাম না পেয়ে ৮০ ভাগ আম ব্যবসায়ী ও চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আশ্বিনার আমের দাম নিয়ে আম চাষিরা কিছুটা আশাবাদী বলে মনে হচ্ছে।

অন্যদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৫ দিন থেকে বন্ধ আছে ম্যাংগো ট্রেন। এতে আম ব্যবসায়ীরা ঢাকায় রেলযোগে কম খরচে আম পাঠাতে পারছেন না। ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আম ব্যবসায়ীরা।  

এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, আমের মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় ম্যাংগো ট্রেন বন্ধ করা হয়েছে।  

এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় এখনো আশ্বিনা ও ফজলি জাতের আম গাছে আছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা এলাকার আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চলতি আমের মৌসুমে ঢাকায় আম পাঠিয়েছি ৫শ কেজিরও বেশি। ঢাকাতে আম পাঠাতে কম খরচ হওয়ায়, অনেককেও পরামর্শ দিয়েছি, তারা যেন ম্যাংগো ট্রেনে ঢাকায় আম পাঠান। তবে হঠাৎ করে ১৭ জুলাই থেকে ম্যাংগো ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকাতে আম পাঠাতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে গিয়ে তেমন লাভ থাকছে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আম ব্যবসায়ী কাইসার আলম বাংলানিউজকে বলেন, এ বছরে আমার বাগানের আম ঢাকায় পাঠিয়েছি ম্যাংগো ট্রেনে। বর্তমানে আমার বাগানে ২৫০ মণেরও বেশি আশ্বিনা জাতের আম আছে। ফজলি জাতের আমগুলো আগাম কানসাটে বেশি বিক্রি করেছিলাম, তাই এখনো বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ মণ আম আছে। ট্রেনে ১ কেজি আম প্রায় দেড় টাকায় পৌঁছে যেত ঢাকায়, আর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাতে গেলে কেজি প্রতি পড়ে প্রায় ১১-১৩ টাকা।

আম আড়তদার আশিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে আম বাজারে আশ্বিনা আম ব্যাপক পরিমাণে রয়েছে। পাশাপাশি ফজলি, আম্রপালি, বারি-৪ আম কম হলেও বাজারে দেখা মিলছে। তবে এসব আমের দাম বেশি। প্রায় প্রতিদিনই ব্যাপারীরা আম ক্রয় করে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন।

আরেক আমচাষি রবিউল আওয়াল বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর বাইরের ক্রেতা না থাকায় কুরিয়ার ও ট্রেনে অনলাইনে আমের অর্ডার বেশি নিয়েছি। তবে ট্রেনে আম পরিবহন সাশ্রয় হওয়ায় অনেকে আম পরিবহনে ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল হলেও গত ২৭ মে চালু হওয়া ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি হঠাৎ করে গত ১৭ জুলাই থেকে বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে অনেকেই ভোগান্তিতে পড়ছেন আম পরিবহনে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ ওয়াবাইদুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, সর্বশেষ ১৬ জুলাই আম নিয়ে যায় ম্যাংগো ট্রেনটি। শেষের দিকে ৫০-৩০ ক্যারেট করে আম বুকিং হতো। আম বুকিংয়ের পরিমাণ কম হওয়ায়, আমাদের জানানো হয় ম্যাংগো ট্রেনটি বন্ধ করার কথা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মিহির কান্তি গুহ বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম দিকে ম্যাংগো ট্রেনটি ভালোই সাড়া ফেলেছিল, ৮০ থেতে ৭০ মেট্রিক টন আম বুকিং হতো। পরে আম কমে যাওয়ায় ৮ মেট্রিক টনে নেমে আসে বুকিংয়ের পরিমাণ। তাই ট্রেনটি বন্ধ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বাগানে আশ্বিনা আর ফজলি জাতের আম গাছে ঝুলছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলায় বেশি আম আছে। বর্তমানে বাগানে শতকরা ১০-১৫ ভাগ আম আছে। তাই আমগুলো পরিবহনের জন্য ট্রেনটি চালু থাকলে চাষিদের জন্য ভালো হতো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad