ঢাকা: দুর্বল ব্যাংকগুলোকে প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। ব্যাসেল-৩ বা ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের আওতায় না থাকা ব্যাংকগুলোকেও এ সুযোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ‘সাম্প্রতিক মুদ্রানীতি কী অর্থনীতির বর্তমান চাহিদা মেটাতে পারবে’ শীর্ষক ব্রিফিংয়ে উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, ঋণ খেলাপি ও দুর্বলভাবে পরিচালিত ব্যাংকগুলোকে কোভিড সম্পর্কিত সহায়তা প্যাকেজের সুবিধার আওতায় আসার সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না। ব্যাসেল-৩ বা ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের আওতায় না থাকা ব্যাংকগুলোকে এ সুযোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
‘স্বচ্ছ ও বস্তুনিষ্ঠ মানদণ্ড তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাকে চিহ্নিত করা উচিত। সহায়তা প্যাকেজ বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং মাসিক ভিত্তিতে বিতরণ পর্যায়ের আরও বিভাজিত তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন রয়েছে। এসব সহায়তা প্যাকেজ দ্রুত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক ও স্বল্প আয়ের মানুষের আছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ’
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, কোভিড অতিমারির বাস্তব চিত্রকে বিবেচনা করে তারপর কোভিড পরবর্তী সময়ে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের জন্য নীতি নির্ধারকদের সুনির্দিষ্ট ও লক্ষ্যভিত্তিক নীতি প্রণয়ন করা উচিত। কোভিড অতিমারির অভিঘাতের ব্যাপ্তি, সহয়তার পরিমাণ ও কাদের সহয়তা দেওয়া উচিত তা নিয়ে একটি বিস্তারিত মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। সরকারি সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশব্যাপী প্রচার-প্রচারণার চালানো দরকার, যেন এসব সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক ও যোগ্য মানুষ এ প্যাকেজগুলো সম্পর্কে অবগত হতে পারে। তারল্য সহায়তা ছোট ঋণগ্রহীতা এবং নতুন ঋণগ্রহীতার ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য অনুপযুক্ত। এজন্য সরকার কর্তৃক সরাসরি নগদ সহায়তা প্রদান করা উচিত যাতে এ গোষ্ঠীগুলো কোভিড অতিমারির ধাক্কা সামলে উঠতে পারে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, বাণিজ্য সংস্থা, নাগরিক সমাজ, বেসরকারি সংস্থা ও শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের নিয়ে কোভিড তারল্য সহায়তা এবং আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের বিতরণ পর্যবেক্ষণ ও তাদের কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা উচিত। অতিরিক্ত তারল্য যুক্ত ব্যাঙ্কগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নেওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলার কারণ চিহ্নিতকরণ, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও এ পরিস্থিতি থেকে টেকসই পরিত্রাণ পেতে একটি লক্ষ্য ও সময় নির্দিষ্ট, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন তৈরি করা উচিত। নতুন ভিত্তি বছরের উপর নির্ভর করে মুদ্রানীতি ও অষ্টম পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনার সব লক্ষ্য, অনুমান ও পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমানে দ্রুত অবনতিশীল কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনা করে বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ নাও হতে পারে। মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যগুলো বাস্তবিক হওয়া উচিত এবং মুদ্রাস্ফীতির হিসাব আপডেটেড কনজাম্পশন বাস্কেটের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা উচিত। অন্যদিকে অর্থনীতিকে আবার সচল করতে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। যদিও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ উদ্যোগ দেখা যায়নি।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২১
এসই/ডিএন/আরবি