ঢাকা: ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ইভ্যালি যাত্রা শুরু করলেও দীর্ঘ তিন বছরে কোনো লাভের মুখ দেখেনি। অথচ বিভিন্ন অফারের নামে গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া অব্যাহত ছিলো প্রতিষ্ঠানটির।
নতুন নতুন গ্রাহকের টাকায় পুরাতন কিছু গ্রাহককে পণ্য দিলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দায় বাড়তে থাকে, বর্তমান সময় পর্যন্ত সেই দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহক অসন্তোষের জেরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এক ভুক্তভোগী। যার ভিত্তিতে বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও তার স্ত্রী-প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
জানা যায়, গ্রেফতার দুইজন বিভিন্ন সময়ে ইভ্যালির অফিসে অপমান হেনস্থা ও ভয়ভীতির স্বীকার হয়েছেন।
ইভ্যালির শুরু যেভাবে:
গ্রেফতার রাসেল প্রতিষ্ঠানটির সিইও এবং তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন চেয়ারম্যান হিসেবে তাদের প্রতারণার অন্যতম সহযোগী। রাসেল ২০০৭ সালে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে ২০১৩ সালে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। তিনি ২০০৯ সাল হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতেন। ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন।
প্রায় ৬ বছর পর ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রায় এক বছর শিশুদের ব্যবহার্য একটি আইটেম নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি ওই ব্যবসা বিক্রি করে ২০১৮ সালে ইভ্যালি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ইভ্যালির কার্যক্রম শুরু হয়।
ভাড়ায় ধানমন্ডিতে একটি অফিস ও একটি কাস্টমার কেয়ার স্থাপন করেন। এছাড়া ভাড়াকৃত স্থানে আমিনবাজার ও সাভারে দুটি ওয়্যার হাউজ চালু করেন। কোম্পানিটি এক পর্যায়ে ২ হাজার স্টাফ ও ১৭০০ কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়।
গ্রাহক টানতে লোভনীয় অফার:
জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল র্যাবকে জানায়, ইভ্যালি ছাড়াও তার আরও কয়েকটি ব্যবসায়িক প্লাটফর্ম রয়েছে। এরই মধ্যে ই-ফুড, ই-খাতা, ই-বাজার ইত্যাদি। ইভ্যালির ব্যবসায়িক কাঠামো শুরু হয়েছিল সামান্য বিনিয়োগ দিয়ে। তার ব্যবসায়িক পরিকল্পনাই ছিল প্রস্তুতকারক ও গ্রাহক চেইন বা নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল অর্থ তুলে নেওয়া।
তিনি বিশাল অফার, ছাড়ের ছড়াছড়ি আর ক্যাশব্যাকের অফার দিয়ে সাধারণ জনগণকে প্রলুব্ধ করতেন। যাতে দ্রুততম সময়ে ক্রেতা বৃদ্ধি পায়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইভ্যালির বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৪৪ লাখেরও বেশি। সাইক্লোন অফার (বাজার মূল্যের অর্ধেক মূল্যে পণ্য বিক্রয়), ক্যাশব্যাক অফার (মূল্যের ৫০-১৫০% ক্যাশব্যাক অফার), আর্থকুয়েক অফার, প্রায়োরিটি স্টোর, ক্যাশ অন ডেলিভারি। এছাড়া বিভিন্ন উৎসব কেন্দ্রীক জমজমাট বৈশাখী, ঈদ অফার, টি-১০, টি-৫ ও টি-৩ অফার। এভাবে বিভিন্ন অফারে প্রলুব্ধ হন সাধারণ জনগণ।
জেনেশুনে নেতিবাচক প্রক্রিয়ায় ব্যবসা পরিচালনা:
ইভ্যালির বিক্রি বাড়াতে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত চাহিদা তৈরি হয় এ ধরনের পণ্যকে বেছে নেওয়া হয়। মূল্য ছাড়ের ফলে যার ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। এর ফলে ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠানটির দায় বাড়তে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির নেওয়ার্কে যত গ্রাহক তৈরি হতো, দায় ততো বৃদ্ধি পায়। রাসেল জেনেশুনে এ নেতিবাচক কৌশল গ্রহণ করেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানান, একটি বিদেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফার (১:২) এর আলোকে ইভ্যালির ব্যবসায়িক কৌশল তৈরি করেছেন।
ব্যবসায়িক ভবিষ্যত কর্ম পরিকল্পনা সম্পর্কে গ্রেফতারকৃতরা জানান, প্রথমত একটি ব্রান্ড ভ্যালু তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। এরপর দায়সহ কোনো প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোম্পানির কাছে বিক্রি করে লভ্যাংশ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিলো তার। এ উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণও করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১
পিএম/এমএমজেড