ঢাকা: আইনি কাঠামোর মধ্যে কৃষিপণ্যের উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দিয়েছে সরকার। ফলে কেউ চাইলেই কোনো কৃষিপণ্যের দাম অতিরিক্ত হারে বাড়াতে পারবেন না।
নির্ধারিত হারের থেকে বেশি লাভে পণ্য বিক্রি করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানার বিধান রেখে কৃষি বিপণন বিধিমালা জারি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
বিধিমালা অনুযায়ী, কৃষি উপকরণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে বা সরকার-নির্ধারিত হারের বেশি মুনাফা করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে কৃষি বিপণন আইনে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সাজা হবে দ্বিগুণ। কৃষি বিপণন আইনের ক্ষমতাবলে এই বিধিমালা জারি করা হয়েছে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, ধান, চাল, গম, ভুট্টা, পাট, চা, তুলা, তামাক, ডাল, কালাই, সব ধরনের মাছ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, কাঁচা মরিচ, শুকনা মরিচ, ধনিয়া, কালোজিরা, ডিম, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, পান, সুপারি, সব ধরনের ভুসি, ডাব, নারিকেল, চিড়া, মুড়ি, সুজি, সেমাই, আটা, ময়দা, কৃষিপণ্যের রস ও জুস, আচার, বেসন, চিপস এবং প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারিতে ১৫ শতাংশ ও খুচরায় সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ হারে মুনাফা করা যাবে।
রাই, সরিষা, তিল, বাদাম, নারকেল, রেঢ়ি, সূর্যমুখী, সযাবিনসহ তেলবীজ উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারিতে ১৫ শতাংশ ও খুচরায় সর্বোচ্চ ৩০ এবং আখের গুড় বিক্রিতে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারিতে ১৫ শতাংশ ও খুচরায় ৩০ শতাংশ লাভ করা যাবে।
এছাড়া সব ধরনের তাজা ও শুকনা ফল উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারিতে ২০ শতাংশ ও খুচরায় ৩০ শতাংশ, তাজা ও শুকনা ফুল, ক্যাকটাস, অর্কিড, পাতাবাহার এবং আলুসহ সব ধরনের শাকসবজি উৎপাদক পর্যায়ে ৪০ শতাংশ, পাইকারিতে ২৫ শতাংশ ও খুচরায় ৩০ শতাংশ লাভ করা যাবে।
আর পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ ও কাঁচা মরিচ উৎপাদক পর্যায়ে ৪০ শতাংশ, পাইকারিতে ২০ শতাংশ ও খুচরায় সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লাভ করা যাবে বলে বিধিমালায় বলা হয়েছে।
বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, বাজারে প্রকাশ্য বা সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণের পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রদর্শন করতে হবে। এছাড়া এসব পণ্যের কেনা দামের মূল রশিদও দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ করতে হবে।
বিধিমালায় কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণের রপ্তানিকারক, আমদানিকারক, ডিলার, মিলার, সরবরাহকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী এবং চুক্তিবদ্ধ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
হিমাগার স্থাপনের লাইসেন্স ফি ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা, নবায়ন ফি ৮০০ টাকা। চুক্তিবদ্ধ চাষ ও বিপণন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান, বড় গুদাম, রপ্তানিকারক, আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের জন্য নতুন লাইসেন্স ফি ১ হাজার ২০০ টাকা ও লাইসেন্স নবায়ন ফি ধরা হয়েছে ৬০০ টাকা।
এছাড়া ছোট গুদাম, পাইকারি বিক্রেতা, আড়তদার, মজুতদার, ডিলার, মিলার, কমিশন এজেন্ট বা ব্রোকারের নতুন লাইসেন্স ফি ধরা হয়েছে ১ হাজার টাকা, নবায়ন ফি ৫০০ টাকা।
ব্যাপারী, ফড়িয়াদের নতুন লাইসেন্স ফি ৩০০ ও নবায়ন ফি ২০০ এবং ওজনদার, নমুনা সংগ্রহকারীদের জন্য নতুন লাইসেন্স ফি ১০০ টাকা ও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা।
জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এতদিন সময়ে সময়ে কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে আসছিল। এই বিধিমালা কার্যকর হওয়ায় বাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সুপারশপগুলোতেও সরকার-নির্ধারিত হারের বেশি মুনাফায় কৃষিপণ্য বিক্রি করা যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২১
জিসিজি/এমজেএফ