ঢাকা: শেয়ারের মার্জিন ঋণ দেওয়ার সুবিধা বাড়িয়ে নির্দেশনা জারি করায় বিদায়ী সপ্তাহে ইতিবাচক রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। টানা পতনের পর বিদায়ী সপ্তাহে (১৪-১৮ নভেম্বর) লেনদেনে চাঙ্গাভাব রয়েছে।
সপ্তাহজুড়ে উভয় পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে টাকার পরিমাণে লেনদেন। বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজারে ১১৮০ কোটি টাকার লেনদেন বেড়েছে। এর মধ্যে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এক হাজার ৯৪ কোটি অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৮৬ কোটি টাকার লেনদেন বেড়েছে।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।
এদিকে বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজার ইতিবাচক থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। বেশ কয়েকটি সপ্তাহ সূচকের পতনে বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলেছিল। বাজারে এমন কিছু হয়নি পতনের মতো। মার্জিন ঋণ নিয়ে বাজারে গুঞ্জন ছিল। শোনা যায় সুবিধা নিতে কিছু ব্রোকাররা কৌশল অবলম্বন করেছেন। এরই মধ্যে বিএসইসির মার্জিন ঋণ দেওয়ার সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়ায় বাজার ইতিবাচক ধারা ফিরছে বলে মনে করছেন তারা।
এ ব্যাপারে মা সিকিউরিটিজ হাউজের বিনিয়োগকারী মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, টানা পতনের মতো বাজারে কিছু হয়নি। তবে মার্জিন ঋণ নিয়ে ব্রোকার হাউজগুলোর মধ্যে কিছুটা অস্বস্তিতে ছিল। কিন্তু বিএসইসি মার্জিন সুবিধা দেওয়ায় বাজারে সূচক ও লেনদেন বেড়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের অস্বস্তি কেটেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, দেশে শেয়ারবাজারের সম্ভাবনা বাড়ছে। চাহিদা ও সরবরাহ দুইদিক থেকেই সমৃদ্ধ হচ্ছে এ বাজার। যা একটি শক্তিশালী বাজারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান কমিশন। তাই আগামীতে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হবে শেয়ারবাজার। চেয়ারম্যানের এমন মন্তব্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ছয় হাজার ৯৯২ কোটি ৬১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল পাঁচ হাজার ৮৯৮ কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯০ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন এক হাজার ৯৪ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার ১৯৮ টাকা বা সাড়ে ১৮ শতাংশ বেড়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯৫.৮৯ পয়েন্ট বা ১.৩৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৯১.৮২ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ২.৭৫ পয়েন্ট বা ০.১৯ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৩.৯৮ পয়েন্ট বা ০.৫২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪৮০.৩৩ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৬৯৪.৯৫ পয়েন্টে।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৪৭০ কোটি ৮ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩১ টাকায়। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৬১ হাজার ৭৮ কোটি ৫৬ লাখ ১৭ হাজার ৫৬২ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে চার হাজার ৬০৮ কোটি ৪৭ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩১ টাকা বা ০.৮৩ শতাংশ বাজার মূলধন বেড়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই ছিল ১৮.৬৩ পয়েন্টে। যা সপ্তাহ শেষে ১৮.৭৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও ০.১১ পয়েন্ট বা ০.৫৯ শতাংশ বেড়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮০টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৩টির, কমেছে ১৯১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬টির শেয়ার ও ইউনিট দর।
বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-বেক্সিমকো লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক, ওরিয়ন ফার্মা, এনআরবিসি ব্যাংক, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফরচুন সুজ, জেনেক্স ইনফোসিস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং লাফার্জ-হোলসিম বাংলাদেশ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ২৫২ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার ৩৭০ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১৬৫ কোটি ৮০ লাখ ৪৩ হাজার ৯৬৩ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ৮৬ কোটি ৩১ লাখ ৬ হাজার ৪০৮ টাকা বা ৫২ শতাংশ বেড়েছে।
সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২২৫.৮৯ পয়েন্ট বা ১.২০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৭২৩.১২ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৪৬টির দর বেড়েছে, ১৭৬টির কমেছে এবং ১৪টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২১
এসএমএকে/এএটি