ঢাকা: বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিবহনের অতিরিক্ত পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনতে বিশ্ব ব্যাংকের বিনামূল্যে দেওয়া কৌশল বাস্তবায়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে রেলওয়ে পরিবহন যা আয় করে সংস্থাটির ব্যয় তার চেয়ে অনেক বেশি।
সুত্র বলছে, সম্পদের অপব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে সরকার কর্মীদের বিল করার মাইলেজ সিস্টেম সংস্কারের মাধ্যমে পরিবহনের জনপ্রিয় মাধ্যমটিকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ রেলওয়ে (বিআর) কে যে ক্রমবর্ধমান ব্যয় গুনতে হয়, তার জন্য কর্মীদের অতিরিক্ত বিলিংয়ের একটি পুরোনো মাইলেজ সিস্টেমকে দায়ি করা হয়।
রেলওয়ের পে অ্যান্ড প্যাকেজ বা চলমান বিল সিস্টেমে শৃংখলা আনতে মাইলেজ সিস্টেমের ওপর হাত শক্ত করার প্রস্ততি নিয়েছে সরকার।
মাইলেজ বা চলমান বিল হলো বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি প্রাচীন ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে কর্মীরা আট ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালনের জন্য বেতন দাবি করে। রেলওয়ের গার্ড, লোকো মাস্টার, ট্রেনেরে টিকিট চেকার এবং অন্যান্য ক্রু সদস্যরা সাধারণত যারা ট্রেন চলাকালীন সময়ে থাকেন।
অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রেলের কর্মীরা মাইলেজ বিলের আড়ালে প্রকৃত বিলের চেয়ে অনেক বেশি সুবিধা নেয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের ২৬ হাজার ১৩৫ জন কর্মচারীর মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ এই মাইলেজ সুবিধা নেয়। মাইলেজ সিস্টেমের অধীনে তারা ১০০ কিলোমমিটার ভ্রমণের পরে একদিনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ পায়।
মাইলেজ বিল হিসেবে রেলওয়ের লোকোমোটিভ মাস্টাররা মূল বেতনের সমপরিমাণ, টিকিটি অ্যান্ড ট্রাভেলিং (টিটি) অফিসার ও গার্ডরা পান মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ।
এই পদ্ধতির মাধ্যমে ট্রেন পরিচালনা করা হলে সরকার প্রতিমাসে ৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারবে। সেবাদানে সক্ষম করার জন্য সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচি অনুসারে রেলওয়ের কর্মচারীদের জন্য প্রদত্ত গ্র্যাচুয়েটি বাবদ বছরে ২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো আর্থিক পুর্ভাবাস, বাজেট প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং আর্থিক প্রতিবেদন স্বচ্ছ ও উন্নত করা। যাতে নির্ধারিত সরকারি সংস্থাগুলোতে পরিষেবা সরবরাহের জন্য আরও ভালো অর্থের সংস্থান পাওয়া যায়।
সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচি অনুসারে রেলওয়ের কর্মচারীদের জন্য প্রদত্ত গ্র্যাচুয়েটি বাবদ বছরে ২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে।
প্যাকেজ সংস্কারের আওতায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগগুলোর কর্মক্ষমতাকে শক্তিশালী ও পর্যবেক্ষণ করা, নিরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বিবৃতি যথাসময়ে জমা দেওয়া নিশ্চিত করা এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা।
প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা বলেন, আসলে আমরা এটি বাতিল করছি না। আমরা সিস্টেমটি ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য করছি।
রেল অভ্যন্তরীণ পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, প্রধান পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ রেলওয়ের ২ হাজার ৯৫৫ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যকে সংযুক্ত করার মাধ্যমে রেলওয়ের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।
তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন এই ধরনের পদক্ষেপ বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ আমরা সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী দীর্ঘদিন ধরে এই সুবিধা ভোগ করছি। লোকোমোটিভ মাস্টার, গার্ড এবং টিটি, যারা আটঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করে তারাই এই সুবিধা পায়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সারাদেশে ৩ হাজার ৯৩ কিলোমিটার নেটওয়ার্কে ৩৬০ টি যাত্রী ও মালবাহী ট্রেনের একটি বহর পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬৩ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করেছে যা আগের বছরে ছিল ৯২ দশমিক ৭১ মিলিয়ন। যাত্রী পরিবহন কমেছে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৭৯ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করেছে। আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পরিবহন করেছিল ৩ হাজার ৯৫৯ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন পণ্য।
বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রী পরিবহন থেকে ৮০ শতাংশের বেশি আয় করে। সে হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয় করেছিল ১১২৫ কোটি টাকা। অপর দিকে একই অর্থবছরে পরিচালন ব্যয় ছিল ৩ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২১
এসই/এসআইএস