ঢাকা: পুঁজিবাজারে সূচকের টানা পতন চলছে। টানা উত্থানের পর পতন এটা অনেকটা স্বাভাবিক।
পুঁজিবাজার নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ।
পুঁজিবাজারে সূচকের টানা পতনের কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পতনের নানা রকম ব্যাখ্যা রয়েছে। একটা হলো ব্যাংক তাদের প্রোফাইল থেকে শেয়ার বিক্রি করছে এবং আমরা শুনছি তাদের শেয়ার বিক্রি করছে আইসিবির সুকুক কেনার জন্য তাদের টাকা দরকার।
সোনালী ও জনতা ব্যাংককে আগে যে তাদের লোন দিয়েছে সেগুলোও চাওয়া হচ্ছে। তারাও বিক্রি করছে। তবে দেখতে হবে তারা সেল বেশি করছে না বাই বেশি করছে। তবে এটা ডিএসই ও বিএসইসি দেখতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) অনেক বেশি শেয়ার হোল্ড করে বিভিন্ন কোম্পানির।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মধ্যে অনেক কিছুরই মতপার্থক্য আছে এজন্য সূচকের কিছুটা পতন হতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন গুজবের কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গুজব আগেও ছিল এখনো আছে, এটা থাকবে। কিন্তু কিছু উদ্যোক্তা আছে তারা শেয়ার বিক্রি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এতে করে সাপ্লাই সাইডে এক্সেস সাপ্লাই৷ ওদিকে ডিমান্ড সাইড উইক। ডিমান্ড সাইডে দূর্বলতার কারণে এমনটি হচ্ছে।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, মার্কেটে দুটি সাইট রয়েছে। একটি হচ্ছে মার্কেটের সাপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা যদি করানো যায়। আরেকটা হচ্ছে মার্কেট যেখানে যাওয়ার যেতে দেওয়া ডিমান্ড সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে। যেমন ডিমান্ড সাপ্লাই এর মাধ্যমে, তাহলে দেখা যাবে। তবে বর্তমানে বাজার বেশি যে পড়বে বলে আমার মনে হয় না। শেয়ারের দাম টানা বাড়ার কারণে শেয়ারের ওভার ভ্যালু হয়ে গেছে। একটি শেয়ার ১০ থেকে ১৫ গুণ হয়েছে। যেমন ৩০ টাকার শেয়ার ৩০০ টাকা, ২০ টাকা শেয়ার ২০০ টাকা, ৫ টাকার শেয়ার ১৫ টাকা, নয় টাকার শেয়ার ২৫ টাকা হয়েছে। অনেকগুলো কোম্পানির ওভার ভ্যালু দেখে আমি নিজেই হতবাক যে, এত দাম কিভাবে সম্ভব। একটা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির দুই বছর যাবত বন্ধ কোন মিটিং করতে পারেনি। যদিও তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়নি। মিটিং ও করতে পারেনি, বোর্ড ও ভেঙে দিয়েছে, সেটার শেয়ার ৭০ টাকা থেকে নিয়ে গেছে ২৩০ টাকা যদিও এখন একটু কমেছে, একটি কোম্পানির শেয়ার বহুদিন ১৮ টাকায় ছিল সেটাকে নিয়ে গেছে ১১৬ টাকায়।
বর্ষীয়ান এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সবসময় বলি তোমরা এই জুয়াড়িদের সঙ্গে টিকবে না। জুয়াড়িদের সঙ্গে যদি দুই বছরের মধ্যে আট বার হারবা দুই বার জিতবা, লাভটা কি? জুয়াড়িরা এসব করছে ওভার ভ্যালু করে। টেক্সটাইল সেক্টরেও শেয়ারের ওভার ভ্যালু হয়েছে। এগুলো কারেকশন দরকার ছিল সুতরাং এগুলো নিয়ে বেশি মাথা ঘামানো উচিত না।
তিনি আরো বলেন, শেয়ারের দাম কমে গেলে অনেকে বলি তখন বেশি করে শেয়ার কিনুন। তারা তখন বলে টাকা তো নাই। যখন সূচক ৭ হাজার পয়েন্ট ওঠে তখন তো টাকা ছিল, এখন টাকা নাই কেন? আমাদের বিনিয়োগকারী অল্প সময়ের মধ্যে বড়লোক হতে চায়। এটা ঠিক না।
তিনি আরো বলেন, গুজব সৃষ্টি করে ফেসবুকের মাধ্যমে কতগুলো গ্রুপ। কিন্তু আপনি গুজবের মধ্যে কেন যাবেন। ফান্ডামেন্টাল দেখে শেয়ার কেনার লোক খুবই কম। বাজারকে স্ট্রং করতে চাইলে ভালো শেয়ারের জোগান দিতে হবে যেসব মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এখনো শেয়ারবাজারের বাইরে আছে তাদেরকে লিস্টিং এ আনতে হবে। কন্সেশন দিয়ে পারুক, উৎসাহ দিয়ে পারুক বা প্রণোদনা দিয়ে পারুক তাদেরকে বাজারে আনতে হবে।
একই সঙ্গে যেসব লোকাল ভালো কোম্পানি আছে তাদেরকেও আনতে হবে তা হলে বাজার শক্তিশালী হবে এবং গুজবও তখন কাজ করবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২১
এসএমএকে/এএটি