বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে লাগাতার বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে সমুদ্র উপকূলে। বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে সুন্দরবনের চারটি চরের দুই কোটি টাকার শুটকি।
সুন্দরবনের আলোরকোল, মাঝের চর, নারকেল বাড়িয়া ও শেওলার চর এলাকায় কমপক্ষে প্রায় ১৫ হাজার জেলে শুটকি আহরণ করছেন। বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ায় গত পাঁচদিন ধরে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না। পাশাপাশি টানা বৃষ্টির ফলে শুটকি পল্লীতে জেলে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে শুটকি পল্লী থেকে রাজস্ব আয়ও কমবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সুন্দরবনের আলোর কোল শুটকি পল্লী থেকে মোবাইলে ব্যবসায়ী আবু তাহের বাংলানিউজকে বলেন, গত পাঁচদিন ধরে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুটকির মাচা ছুঁই ছুঁই পানি হয়েছে। এছাড়া অবিরাম বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে চরের অসংখ্য মাচার শুটকি। আমার নিজেরই প্রায় সাত লাখ টাকার শুটকি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া সাতদিন ধরে আমার ২৬ জন জেলে ট্রলার নিয়ে সাগরে যেতে পারছেন না। এর ফলে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হচ্ছি আমরা। গত বছর করোনার কারণে ২৫ লাখ টাকার লোকসান গুনেছি। এবার শুরুতেই বড় ধরনের বাধা আসল। বাকি সময়ে কি হবে জানি না।
শুটকি পল্লীর জেলে আজাদ শেখ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মোট ১৮ জন জেলে এসেছি শুটকি আহরণ করতে। পাঁচদিন ধরে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছি, সাগরে নামতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে, শুটকি পল্লীতে আসার জন্য করা ঋণের টাকাই শোধ করতে পারব না, লাভতো দূরে থাক।
বিকাশ বিশ্বাস নামের আরেক জেলে বলেন, শুটকি আহরণের বছরের প্রায় পাঁচ মাস সাগরে অবস্থান করি। এই সময়ের আয়ে আমাদের সারা বছর চলে। কিন্তু হঠাৎ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বৃষ্টিতে সুন্দরবনের বিভিন্ন চরে রোববার থেকে তিনফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যপ্রাণী ও গাছগাছালির ক্ষতি না হলেও শুটকি পল্লীর বেশ ক্ষতি হয়েছে। জেলেদের তথ্য অনুযায়ী টানা বর্ষণে প্রায় দুই কোটি টাকার শুটকির ক্ষতি হয়েছে চরগুলোতে। এর ফলে রাজস্বও কমে আসবে শুটকি পল্লী থেকে। তবে মৌসুমের বাকি সময়গুলো আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন জেলেরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২১
এনটি