ঢাকা: এক সময় রেস্টুরেন্ট এর নিজস্ব ডেলিভারি সেবা ছিল না এবং অর্ডার করে খাবার নেওয়াও ছিল কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। আবার, চাকরিজীবীদের জন্য অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীরে প্রতিদিন রান্না করা ছিল বাড়তি ঝামেলা।
খাত’।
এর দু’ বছর পরই শহরের মানুষের যাতায়াতের সহজ সমাধান নিয়ে চালু হয় রাইড শেয়ারিং সেবা। মোবাইল ফোনে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা মোটরসাইকেল ডেকে দিন-রাত যেকোনো সময় নিশ্চিন্তে পৌঁছানো যায় গন্তব্যে।
অনলাইন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনীয়তার সূত্র ধরেই এসব অনলাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মানুষের গতানুগতিক জীবনধারায় এনেছে আমূল পরিবর্তন। প্রযুক্তির এই যুগে চারদিকে যখন ডিজিটালাইজেশনের জয়জয়কার, তখন যাতায়াত, ব্যবসা থেকে শুরু করে বিনোদন, কেনাকাটা পর্যন্ত সব কাজে লেগেছে ডিজিটাল উদ্ভাবনীর ছোঁয়া। এখন, মানুষের কেনাকাটা এবং নানাবিধ সেবা গ্রহণের যাবতীয় চাহিদা মেটাচ্ছে বিভিন্ন ই-কমার্স ও অনলাইন সেবা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্ভাবনাময় প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতে নতুন আশার সঞ্চার হচ্ছে।
অনলাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের সুযোগ বাড়ছে উল্লেখ করে অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষের জীবনধারাতেই নয়, দেশের কর্মসংস্থানের চিত্রেও পরিবর্তন এনেছে বিভিন্ন রাইড-শেয়ারিং আর ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান। মহামারির সময় বিশাল সংখ্যক মানুষ বেকারত্বের খাতায় যখন নাম লেখায়, তখন এসব হতাশাগ্রস্ত মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় এসব অনলাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে। অনেক শিক্ষার্থী ও তরুণরা নিজের মাসিক খরচের অর্থ যোগাতে এসব প্রতিষ্ঠানে ‘রাইডার’ পেশায় যোগ দেন।
বাড়িতে বসে খাবারের ব্যবসা করতে আগ্রহী হোম কুকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে ফুডপ্যান্ডা, পাঠাও এর মতো অ্যাপগুলো। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নেও কাজ করছে এসব অ্যাপভিত্তিক সেবা প্রতিষ্ঠান। গত কয়েক বছরে এই সেক্টরে নারী এবং ট্রান্সজেন্ডাররাও সংযুক্ত হয়েছে যা তাদের আর্থিক সাবলম্বতা অর্জনে সহায়তা করেছে।
এ প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবাগ্রহীতারা জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যের কথা তুলে ধরে বলছেন, লকডাউনের সময় বাইরে চলাফেরা এবং রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়ার ওপর বিধি-নিষেধ ছিল। সে সময় সবাই যেন ঘরে বসে রেস্টুরেন্টের সুস্বাদু খাবার উপভোগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করেছে ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানগুলো। মানুষের কাজে গতি এনে দেওয়ার সঙ্গে এগুলো মানুষকে আরও কর্মক্ষম করে তুলেছে। যখন-তখন যেকোনো জায়গায় যাওয়া এখন শুধু মোবাইলে কয়েক ট্যাপের ব্যাপার। বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা বাসায় দাওয়াতে আড্ডায় মেতে ওঠার জায়গায় কাউকে আর রান্না নিয়ে ভাবতে হয় না।
এছাড়া রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালনার প্রকৃতিতে পরিবর্তন এসেছে বিভিন্ন ফুড ডেলিভারি সেবা প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে। বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টই এখন ডাইন-ইন এর পাশাপাশি এসব সেবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রাহকদের বাড়ির দোরগোড়ায় খাবার পৌঁছে দিচ্ছে।
অনলাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ই-কমার্স আমাদের জীবনধারার মানোন্নয়ন, ডিজিটালাইজেশন ত্বরান্বিতকরণ, দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি, উদ্যোক্তা তৈরি ও কর্মসংস্থান যোগানের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতেও এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
মহামারি পরবর্তী সময়েও মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করবে, ফলে এ খাতে আরও বেশি কর্মসংস্থান হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২২
আরআইএস