সিলেট: গ্রাহকের স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সিলেটে সিটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১২ কোটি টাকার মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে সিলেট জেলা যুগ্ম আদালতে মামলাটি (নং-০২/২০২২) দায়ের করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী নগরের উত্তর পীরমহল্লার বাসিন্দা সৈয়দ আখলাক মিয়া।
মামলায় ছয় কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি। তারা হলেন—সিটি ব্যাংক রাজধানীর গুলশান প্রধান শাখার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্যাংকের সিলেটের বন্দরবাজার শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম), সিলেটের জিন্দাবাজার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান শাখার ডেপুটি গভর্নর।
মামলায় বাদী এফডিআরের আত্মসাৎকৃত মূল টাকা, লভ্যাংশ ও মানহানির ঘটনায় ১২ কোটি ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দাবি করেছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বিপ্রদাস ভট্টাচার্য বলেন, প্রবাসী সৈয়দ আখলাক মিয়া দীর্ঘদিন বিদেশ থেকে দেশের স্বার্থে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। তার কষ্টার্জিত টাকা সিটি ব্যাংকে রেখেছিলেন। সিটি ব্যাংক তা আত্মসাৎ করেছে। এটা দুঃখজনক ও ন্যক্কারজনক। ঘটনাটি ২০০৮ সালের। সিটি ব্যাংকে তিনি ৭০ লাখ টাকা দিয়ে এফডিআর করেন। তৎকালীন ব্যাংক ম্যানেজার বাদীকে বলেছিলেন, তিনদিন পর আমরা মূল কাগজ হস্তান্তর করি। পরবর্তীতে তিনি লন্ডন চলে যান। সেখান থেকে ব্যাংকে যোগাযোগ করার পর ম্যানেজার বলেন, আমরা কাগজগুলো যত্নে রেখেছি, আপনাকে ফটোকপি পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপর ম্যানেজারের কথায় বাদী বিশ্বাস স্থাপন করেন। এরপর তিনি আবার দেশে আসেন। তখন ম্যানেজার মুজিবুর রহমান পুনরায় বলেন, ব্যাংকে রাখা ২২ লাখ টাকাও এফডিআর করতে। তিনি সরল বিশ্বাসে এফডিআর করেন। তিনি এফডিআরের কাগজপত্র চাইলে আবারো পরে দেবেন বলে বাদীকে আশ্বস্ত করেন। বাদী যুক্তরাজ্যে চলে যান। সেখান থেকে এফডিআরের ডকুমেন্ট হিসাব চেয়ে ব্যাংকে চিঠি দেন।
বাদীর আইনজীবী আরও বলেন, এ ঘটনায় প্রাক্তন ব্যবস্থাপক বরখাস্ত হয়ে যান। পরবর্তীতে আসা সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এই গ্রাহককে বলেন, আপনার অ্যাকাউন্টে সমস্যা হয়েছে। আগের ম্যানেজার বরখাস্ত হয়েছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এ কথা শোনার পর বাদী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত হন। মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তিনি বিভিন্ন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
পরে বাদী সিটি ব্যাংকের এমডি ও ব্যাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেন। কিন্তু সিটি ব্যাংক উল্টো বাদীকে হয়রানি করতে তার ওপর ফৌজদারি আইনে সিআর মামলা দায়ের করে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল, যদি গ্রাহক তথা বাদীকে জেলে ঢোকানো যায়, তবে আপসে নিষ্পত্তি করতে বাধ্য হবেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে আবারও হয়রানি করা হয়। ওই মামলা থেকে তিনি নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়ার পরও খালাস আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলার শুনানি করানো হলো। এরপর মহানগর আদালতের খালাস আদেশ উচ্চ আদালত বহাল রাখেন। তারপরও সিটি ব্যাংক ক্ষান্ত হয়নি। মামলাটি হাইকোর্টের আপিল বিভাগে নেওয়া হয়। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে। এটা ইতিহাসের একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা গ্রাহকের টাকা ব্যাংক মেরে গ্রাহককে জেলে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য মামলা করা হয়। এ ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়।
এ ঘটনার প্রতিকার পেতে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে ১২ কোটি ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেছি, মামলায় ন্যায়বিচার পাব, বলেন বাদীর আইনজীবী।
মামলার বাদী সৈয়দ আখলাক মিয়া বলেন, আমি দেশে আসার পর বিনিয়োগ করতে চাইলে ব্যাংকে টাকা চেয়ে চিঠি দেই। টাকা চাইতে গেলেই ব্যাংক ম্যানেজার বলেন, টাকা ইনক্যাশ হয়ে গেছে। তখন আমাকে বলা হয়, ৬ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ঘটনাটি শুনে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। উপরন্তু তারা আমাকে অপেক্ষায় রেখে পাল্টা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। মাল ক্রোকের অর্ডার করে। ২০১৭ সালে ব্যাংকের মামলা থেকেও তিনি খালাস পান। ওই মামলা তারা উচ্চ আদালতে নিয়ে যায়। সেখান থেকেও আমি খালাস পাই। এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। এ কারণে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি এবং প্রতিকার পাব বলে আশাবাদী।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২২
এনইউ/এমজেএফ