ঢাকা: জাতীয় শিল্পনীতি ২০২১ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে বর্তমান নীতিতে থাকা অনেক সুবিধার সুফল নিতে পারছেন না উদ্যোক্তারা।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিটির প্রথম সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
এ সময় তারা অভিযোগ করেন, দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন নীতি একে অন্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ কারণে নানা ক্ষেত্রে নীতি সুবিধা বঞ্চিত হতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। ফলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে শিল্পায়ন।
বৈঠকে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও শিল্প এবং শিল্পনীতি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, শিল্পনীতি বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি। এছাড়াও অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রণালয়কে বিশেষায়িত করা প্রয়োজন।
তিনি অভিযোগ করেন, বিসিক শিল্পনগরীতে কোনো সেবা না পেলেও সার্ভিস চার্জ গুনতে হয় উদ্যোক্তাদের। সংশ্লিষ্ট শিল্পমালিকদের সঙ্গে আলোচনা না করেই কখনো কখনো এ চার্জ ৫০ থেকে ৬০% বাড়ানো হচ্ছে। বিসিকের বিভিন্ন শিল্পনগরীতে জমির উচ্চমূল্যের কারণে শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিভিন্ন দেশ তাদের শিল্পের সুরক্ষা দিতে বিদেশি পণ্যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কসহ নানা রকম বিধিনিষেধ আরোপ করে। বাংলাদেশকেও স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় এসব পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
বৈঠকে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক এবং রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, অর্থনীতিতে ৫০ শতাংশের বেশি অবদান রাখে সেবাখাত। কিন্তু শিল্পনীতির খসড়া এ খাতকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। অর্থনীতির বিকাশে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও শিল্পনীতিতে তার উল্লেখ নেই। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ক কর্তৃপক্ষের নীতি ও শিল্পনীতির মধ্যে অনেক অসামঞ্জস্য থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
জাতীয় শিল্পনীতি ২০২১ এর খসড়ার ওপরে আলোচনায় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা বলেন, বিভিন্ন নীতির মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। শিল্পনীতিকে সর্বোচ্চ নীতি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যাতে অন্য কোন নীতি সাংঘর্ষিক হলে শিল্পনীতির বিধান অনুযায়ী উদ্যোক্তারা সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। নতুন শিল্পনীতিতে এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্রকরণ, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার ও এসএমই খাতকে গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশ সার্কুলার অর্থনীতির দিকে হাঁটছে এবং এ বিষয়ে এফবিসিসিআইও কাজ করছে। আগামী শিল্প নীতিতে সার্কুলার অর্থনীতি, ও লজিস্টিকসকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান বক্তারা। নতুন নীতিতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সংজ্ঞা নির্ধারণে কর্মীর সংখ্যাকে হিসাব না করে টার্নওভার ও মূলধনের পরিমাণকে বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান করেন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা। এছাড়াও শিল্পের বিকাশে জমির সহজলভ্যতা ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের নিশ্চয়তা চেয়েছেন উদ্যোক্তারা।
ব্যবসায়ীরা বলেন ২২৭টি পণ্য দেশে উৎপাদন করতে বিএসটিআইয়ের মান সনদ লাগে। অথচ আমদানির বেলায় এ মানসনদ লাগে মাত্র ৫৫টি পণ্যের। এই বৈষম্যের সুযোগ নিয়ে অনেক নিম্নমানের বিদেশি পণ্য দেশীয় বাজার দখল করেছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
দেশে শিল্প স্থাপনে ৩০টি সনদ লাগে, যা প্রতিবছর নবায়ন করতে হয়। অথচ ভিয়েতনামে এ সংখ্যা মাত্র ৫টি এবং নবায়ন করার কোনো বিধান নেই। দেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশের সনদের সংখ্যা ৫টিতে নামিয়ে আনা এবং নবায়ন করার বিধান বাতিলের সুপারিশ আসে বৈঠকে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (নীতি) মো. সেলিম উল্লাহ খসড়া শিল্পনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক ও আসিফ ইব্রাহিম এবং এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবুল কাশেম খান, ড. নাদিয়া বিনতে আমিন, আব্দুল হক, এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবীর, এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা মনজুর রহমান, বিল্ডের সিইও ফেরদৌস আরা বেগম।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২২
এসই/জেডএ