ঢাকা: বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বনিম্ন বেতন-ভাতা বাস্তবায়নের জন্য এক বছর সময়ে চেয়েছেন চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে বাস্তবায়ন করা হলে ব্যাংকগুলোর বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় কমে যাবে বলে তারা গভর্নরকে জানিয়েছেন।
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণের পাশাপাশি বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি ও চাকরি স্থায়ীকরণে কর্মীদের আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া যাবে না মর্মে ২০ জানুয়ারি একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই সার্কুলার বাস্তবায়নে কম করে হলেও এক বছর সময় চেয়েছেন বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি)। ২৬ জানুয়ারি বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) নেতারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের দীর্ঘ তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন।
ওই বৈঠকেই নতুন বেতন-ভাতা বাস্তবায়নে বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা গভর্নরের কাছে এক বছর সময় চেয়েছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের দাবি কতটুকু গ্রহণযোগ্য সেটা বিবেচনা করেই সময় দেওয়া হবে কিনা সিদ্ধান্ত জানাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিএবি ও এবিবি নেতারা গভর্নরকে বলেছেন, নতুন বেতন-ভাতা বাস্তবায়ন করা হলে বছরে ২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে যাবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও বেসরকারি ব্যাংকে নতুন বেতন-ভাতা বাস্তবায়ন হলে অন্যখাতের কর্মীরাও ব্যাংকে চাকরির জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়বে।
বৈঠকে বিএবি ও এবিবির পক্ষ থেকে বেতন-ভাতা বৃদ্ধিতে কিছু সমস্যা তুলে ধরে গভর্নরকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, অফিস সহকারী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন ধরা হয়েছে ২৪ হাজার টাকা, যা দেশের তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বেতনের কয়েক গুণ। বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের কর্মীদের আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আমলে না নিলে চাকরি স্থায়ীকরণ ও বেতন বাড়ানো সম্ভব হবে না বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিএবি ও এবিবি নেতারা গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করে বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ সার্কুলারটি বাস্তবায়নের জন্য কিছু সময় চেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখবে।
বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, যখনই সাধারণ কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো উদ্যোগ গ্রহন করে তখনই ব্যাংক মালিকরা বিভিন্ন অজুহাত দেখায়। অথচ আমাদের শ্রমেই ব্যাংক শতশত কোটি টাকা মুনাফা করে আসছে বছরের পর বছর।
২০ জানুয়ারি জারী করা বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, সহকারী ক্যাশ ও জেনারেল কর্মকর্তাদের শিক্ষানবিশকালের বেতন হবে ২৮ হাজার টাকা। শিক্ষানবিশকাল শেষে বেতনের পরিমান দাড়াবে ৩৯ হাজার টাকায়। এছাড়াও অফিস সহকারী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, বার্তাবাহকদের সর্বনিম্ন বেতন হবে ২৪ হাজার টাকা। চাকরি স্থায়ীকরণ ও বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দেওয়া যাবে না আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা।
বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস’র (বিএবি) ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে বেসরকারি ব্যাংক, সমাজ ও কম বেতনের কর্মীরা কতটুকু উপকৃত হবে সেটা গভর্নরকে অবগত করেছি। মার্চে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে কিছুটা এলোমেলো হতে পারে তাই আমরা সময় চেয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২২
এসই/এমজেএফ