ঢাকা: সমন্বয়ের অভাবে দেশের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা (সিএমএসএমই) সরকার ঘোষিত ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ঋণ সহায়তা বঞ্চিত হচ্ছেন।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ব্যাংক হতে সিএমএসএমই ঋণ/প্রণোদনা প্যাকেজ প্রাপ্তির পদ্ধতি ও প্রস্তুতি’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল কর্মশালায় বক্তারা এ অভিযোগ করেন।
বক্তারা বলেন, সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োজনীয় নথিপত্রের অভাব, সিএমএসএমই সংজ্ঞায়নের জটিলতা, জটিল ঋণ বিতরণ পদ্ধতি, উদ্যোক্তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকা, ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল সম্পর্ক, জামানত সংক্রান্ত সমস্যা এবং এসএমই ডাটাবেইজের অনুপস্থিতি এবং আর্থিকখাতের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।
ফলে দেশের সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ঘোষিত ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ঋণ সহায়তা প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, শিল্পখাতে ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ৪৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন করে সিএমএসএমই খাত। তবে প্রয়োজনীয় আর্থিক এবং নীতিগত সহায়তার অভাবে সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতার পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না।
তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের পুনরুজ্জীবন ও সম্প্রসারণ এবং সর্বোপরি আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে সর্বমোট ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সিএমএসএমই সংজ্ঞায়নের জটিলতা, সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োজনীয় নথিপত্রের অভাব, জটিল ঋণ বিতরণ পদ্ধতি, উদ্যোক্তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকা, ব্যাংকের সাথে দুর্বল সম্পর্ক, জামানত সংক্রান্ত সমস্যা, এসএমই ডাটাবেইজের অনুপস্থিতির কারণে ঘোষিত প্যাকেজের আওতায় সহায়তা প্রাপ্তিতে ব্যর্থ হয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। সে কারণেই প্রণোদনা প্যাকেজের অর্ধেকের বেশি ঋণ এখনো বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের পুনরুজ্জীবিত করতে এই প্রণোদনা প্যাকেজের যথাযথ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই বলে মত প্রকাশ করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রাম বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. জাকের হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতিতে সিএমএসএমই খাতের অবদানের বিষয়টি মাথায় নিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক করোনা মহামারি মোকাবিলায় এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ইতোমধ্যে দুই দফায় ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে এ ঋণ বিতরণের হার সন্তোষজনক নয়।
তিনি বলেন, প্রথম ধাপের ২০ হাজার কোটি টাকা থেকে ইতোমধ্যে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় ধাপের ২০ হাজার কোটি টাকা থেকে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৬ হাজার ২১৭ কোটি টাকা সিএমএসএমই খাতে বিতরণ করা হয়েছে, যা প্রদত্ত প্রণোদনা প্যাকেজের মাত্র ৩১ শতাংশ এবং যা আসলেই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং প্রয়োজনীয় টাকার বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও উদ্যোক্তা এবং আর্থিকখাতের মধ্যকার সমন্বয়ের অভাবের কারণে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে খুলনা, রংপুর এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রান্তিক পর্যায়ের ঋণ বিতরণের অবস্থা পর্যালোচনায় ওই এলাকা সফর করেছে এবং ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। মাঠ পর্যায়ে উদ্যোক্তা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভ্রান্ত ধারণার কারণেই ঋণ বিতরণের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২
এসই/এমজেএফ