ঢাকা: দেশে কার্যরত নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও তাদের গ্রাহকরা এবং ব্যাংকগুলোও বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন নিষ্পত্তি করার সুযোগ পাবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক রিয়েল-টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) সুবিধা সম্প্রসারণ করতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ অর্থের প্রচলনকে আরও প্রসারিত করতে সহায়তা করবে। কারণ, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় দুই থেকে তিনদিন আটকে থাকার পরিবর্তে আর্থিকখাতে তাৎক্ষণিক তহবিল স্থানান্তর হবে।
একটি নিরাপদ, সুরিক্ষত এবং দক্ষ আন্তঃব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম সহজ করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলমান ডিজিটাইজেশন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোর রিয়েল-টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) প্ল্যাটফর্ম চালু করে।
ইলেকট্রনিক সেটেলমেন্ট সিস্টেম রিয়েল টাইমে এবং গ্রস ভিত্তিতে আন্তঃব্যাংক তহবিল স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়ার ফলে লেনদেন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিষ্পত্তিও করা হয়।
আরটিজিএসে লেনদেনের সর্বনিম্ন পরিমাণ ১ লাখ টাকা এবং তার বেশি। তবে সরকারি অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো সর্বোচ্চ সীমা নেই। কাগজ-কলম ভিত্তিক লেনদেন ব্যবস্থার প্রতিস্থাপন আরটিজিএস শুরু থেকেই ব্যাংকার-গ্রাহকদের আকর্ষণ করেছে। দেশের ৬০টি ব্যাংকের ১০ হাজারের বেশি শাখা বর্তমানে আরটিজিএস সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রাহকরা আরটিজিএস সিস্টেমের মাধ্যমে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ১৮৩ কোটি টাকার লেনদেনে নিষ্পত্তি করেছেন, যা আগের মাসের তুলানায় ১২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। ফেব্রুয়ারিতে মোট লেনদেন হয়েছে ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৭৩০টি, যা আগের মাসের তুলনায় ৬ শতাংশ কম।
বর্তমানে প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে দেশের ভিতরে স্থানীয় মুদ্রা টাকায় লেনদেনের অনুমতি রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ উদ্যোগ ব্যাংকগুলোকে দেশি এবং বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন নিষ্পত্তি করার অনুমতি দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের ১ জুন থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন শুরু করতে প্রস্তত। এটি চালু হলে ব্যাংকগুলোর আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত লেনদেন নিষ্পত্তি কার্যক্রম আরও সহজ হবে।
বর্তমানে ব্যাংকগুলোর এ ধরনের লেনদেন করার জন্য একজন কর্মীর মাধ্যমে ফরেন ডিমান্ড ড্রাফট (এফডিডি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রেখে আসতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঋণদাতাদের কাছে পাঠায়।
এফডিডির এ ধরনের লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাব রাখতে হয়, যার মাধ্যমে লেনদেন পরিচালিত হয়।
ফরেন ডিমান্ড ড্রাফট (এফডিডি) হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চ্যানেল ব্যবহার করে আন্তঃব্যাংক তহবিল স্থানান্তরের সুবিধার্থে ব্যাংকগুলো ব্যবহৃত একটি সমঝোতার কেন্দ্র, যা নিষ্পত্তির জন্য এক কার্যদিবস সময়ের প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা বলেন, আরটিজিএসের মাধ্যমে এ ধরনের লেনদেনেগুলো দ্রততম সময়ে সম্পন্ন করতে করতে সাহায্য করবে।
এ বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ ধরনের সেবা চালু করার জন্য অনুরোধ করে আসছে। কারণ এটি চালু হলে তাদের বৈদেশিক মুদ্রা সংক্রান্ত লেনদেন আরও দক্ষতার সঙ্গে নিষ্পত্তি করতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একদিনের মধ্যে ফরেন ডিমান্ড ড্রাফট (এফডিডি) নিষ্পত্তি করে, তারপরও ব্যাংকগুলোকে লাভবান হওয়ার জন্য দুই থেকে তিনদিন সময় লাগে। আসন্ন প্রক্রিয়াটি ব্যবসায়ীদের দ্রুতগতিতে আমদানি ও রপ্তানি সর্ম্পকিত লেনদেন নিষ্পত্তি করতে সহায়তা করবে।
ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরটিজিএস প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার অনুমতি দিলে তাদের সক্ষমতা আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক বা অন্য নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তহবিল স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিচালিত হিসাবের ম্যানুয়াল চেক ব্যবহার করতে হয়।
এ ধরনের লেনদেন নিষ্পত্তি করার জন্য কমপক্ষে একদিন সময় লাগে। কিন্তু আরটিজিএস প্ল্যাটফর্ম প্রক্রিয়াটি দ্রততর করবে কারণ তখন আর বাংলাদেশ ব্যাংকে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক দুই থেকে তিনমাসের মধ্যে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এই সেবা চালু করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছি। নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরটিজিএসের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে ১৮টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে আরটিজিএস সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
জানতে চাইলে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম বলেন, সিস্টেমটিতে যুক্ত হলে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও সুবিধা পাবে, গ্রাহকরাও উপকৃত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২২
এসই/এমজেএফ