ঢাকা: ইসলামি জীবনের প্রতি আগ্রহের কারণে শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং এখন আগের চেয়ে বেশ জনপ্রিয়। একই সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদের নগদ ইসলামিক অ্যাকাউন্ট।
গত তিন বছর ধরে সেবাটি চালু রেখেছে নগদ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটি আগ্রহের কেন্দ্রে চলে এসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নগদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কথা মাথায় রেখে গত তিন বছর ধরে মুসলিম জীবনধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ‘নগদ ইসলামিক’ অ্যাকাউন্ট চালু রেখেছে নগদ।
সম্পূর্ণ শরিয়াহ পর্যবেক্ষক কমিটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই প্ল্যাটফর্মটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে ইসলামিক অর্থ ব্যবস্থার নিশ্চয়তা দিয়ে আসছে বলেও জানানা তারা।
এর মাধ্যমে গ্রাহকরা ঘরে বসেই খুব সহজেই সুদমুক্ত ও শরিয়াহসম্মত উপায়ে নিজস্ব তহবিল পরিচালনা করতে পারছেন। দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মধ্যে ‘নগদ’-ই শুধু ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার এ সুযোগ দিচ্ছে।
‘নগদ ইসলামিক’ অ্যাকাউন্টের শুরু থেকেই নিয়মিতভাবে এটি ব্যবহার করে আসছেন মাদরাসা শিক্ষক গোলাম মাওলা। তিনি বলেন, ইসলামে সুদ হারাম বলে এতদিন আর্থিক লেনদেন থেকে দূরে ছিলাম, নগদ ইসলামিক একাউন্টে বিনা সুদে লেনদেনসহ টাকা গচ্ছিত রাখা যায় বলে গত তিন বছর যাবত এটি ব্যবহার করে আসছি। এতে ঝামেলাও কম।
গোলাম মাওলার মতো এমএফএস সেবা হিসেবে ‘নগদ’-এর এমন উদ্যোগের উপকারভোগীর সংখ্যাও অনেক। মুসলিম গ্রাহকদের পাশাপাশি অমুসলিম গ্রাহকদের কাছেও নগদ এর ইসলামি অর্থ-ব্যবস্থাপনা মাধ্যমটির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এক গভর্নর বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মভীরু। তারা সুদভিত্তিক কারবারের পরিবর্তে শরিয়াহভিত্তিক কারবারে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে ইসলামিক সেবা সম্পর্কে তিনি বলেন, এমএফএস-এ টাকা জমা রাখায় আমানতকারী যেকোনো সময় এটি উত্তোলন করতে পারে, প্রয়োজনে টাকা পাঠাতেও পারে। এজন্য এ সেবার গ্রাহক দিন দিন বাড়ছে।
এক্ষেত্রে দেশে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক নীতিতে আর্থিক সেবা দেয়ার নিশ্চয়তা দিলেও যেহেতু সেসব জায়গায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে, নানান রকম ফরম ফিলাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া আছে সে কারণে শরিয়াহভিত্তিক মোবাইল লেনদেনের দিকে বেশি ঝুঁকছে মানুষ।
এ বিষয়ে ‘নগদ’র নির্বাহী পরিচালক ও শরিয়াহ বোর্ডের সদস্য মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, গত তিন বছর থেকে এই সেবার সঙ্গে যুক্ত আছেন অনেক গ্রাহক। নগদ ইসলামিক অ্যাকাউন্ট স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য এবং সম্পূর্ণ ইসলামিক নীতিতে পরিচালিত হয়ে আসছে। গ্রাহকেরা বিশ্বস্ততার সঙ্গে যাবতীয় ইসলামিক সেবা নিতে পারেন নগদ-এর ডিজিটাল ওয়ালেটে, যার ফলে দেশ ক্রমেই ক্যাশলেস সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে ধাবিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
দেশের বিদ্যমান ৬২টি ব্যাংকের মধ্যে ১০টি পূর্ণাঙ্গভাবে এবং ৩৪টি বিভিন্নভাবে শরিয়াভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের সেবা দিচ্ছে।
‘নগদ ইসলামিক’ অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি
এই প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়াও অনেক সহজ। অ্যাকাউন্ট চালু করতে সশরীরে কোথাও যাওয়া অথবা বাড়তি কোনো ফরম পূরণেরও প্রয়োজন হয় না। গ্রাহকেরা খুব সহজে ঘরে বসেই তাদের নিয়মিত ‘নগদ’ অ্যাপ-এ ‘আমার নগদ’ অপশনে ক্লিক করে চলমান নগদ অ্যাপকে ইসলামিক অ্যাকাউন্টে রূপান্তর করতে পারছেন। এতে গ্রাহকদের হয়রানি যেমন কমেছে তেমনি লেনদেনের প্রক্রিয়া অনেক সহজতর হয়েছে।
নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে মুসলিম গ্রাহকদের কাছে বহুল পরিচিতি পেয়েছে ‘নগদ ইসলামিক অ্যাকাউন্ট’। ইসলামি শরিয়াহ অনুসারে পরিচালিত হওয়ায় কোনো সুদ ছাড়াই গ্রাহকেরা নিজের কষ্টার্জিত অর্থ সঞ্চয় কররা সুযোগ পাচ্ছেন নগদ ইসলামিক অ্যাকাউন্টে।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে যাকাত এবং সকল দান করার পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা খুব সহজেই হজ্জ্ব এবং উমরাহর যাতায়াতসহ অন্যান্য যাবতীয় খরচ এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২২
কেএআর