ঢাকা: আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে ভোজ্য তেলের বাজার। সম্প্রতি বিশ্বে পাম অয়েলের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া তেল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দেশের বাজারে লাগামহীনভাবে বাড়ছে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম।
গত কয়েক দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল লিটারে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে তেলের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি না পেয়ে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।
রোববার (০১ মে) রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও তালতলা এলাকার খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানা যায়।
এসব এলাকার দোকানিরা বলছেন, ডিলাররা তেল দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় আজ কয়েকদিন হলো তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। জানি না কবে থেকে আবার দোকানে তেল বিক্রি করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে শেওড়াপাড়ার ভাই ভাই জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তেলের দাম আজ কয়েকদিন বাড়তি বলে ডিলাররা কোনো তেল দিচ্ছে না। আমরাও তেল বিক্রি করতে পারছি না। ক্রেতারা তেল কিনতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
১০/১৫ দিন ধরে তেলের ডিলার আসছেন না। যোগাযোগ করা হলে বলছেন তেল নেই। দোকানে যে পরিমাণ তেল ছিল সেগুলো বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানালেন কাজীপাড়া প্রাইমারি স্কুলের অপর প্রান্তে অবস্থিত মুদি দোকানি সাইফুল ইসলাম শওকত।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ক্রেতাদের সবকিছুই দিতে পারছি তেল ছাড়া, তেল না পেয়ে কোনো কোনো ক্রেতা আমাদের উপরেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
একাধিক দোকানে ঘুরেও তেল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা কবির হোসেন। তিনি বলেন, দাম বাড়া বা কমা যাই হোক খেতে তো হবে। কিন্তু মহল্লার কয়েকটি দোকান ঘুরেও তেল পেলাম না। এটা কেন হলো, কারণও জানি না।
বর্তমানে তেল সরবরাহ না থাকায় এর প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মাওলা। তিনি বলেন, আমদানিকারকদের কাছ থেকে তেল এনে আমাদের সরবরাহ করতে হয়। আমরা যদি তেল আনতে না পারি তাহলে কীভাবে বাজারে দেব?
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব বাজারে তেল নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে এজন্য আমাদের মজুদের প্রয়োজন রয়েছে। তেল মজুদ করতে না পারলে তেলের দাম আরও বাড়বে। কিন্তু আমরা মজুদও করতে পারছি না। আমাদের গুদামে ১০ ড্রাম তেল পেলেও জরিমানা করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে!
অপরদিকে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোজ্য তেল মজুদ করছেন, এমন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাজার তদারকি করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অবৈধভাবে কেউ তেল মজুদ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাশ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ভোজ্য তেলের বাজারে তদারকি অভিযান পরিচালনা করছি। কেউ কারসাজি করে তেলের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গতকাল এবং আজও কারওয়ান বাজারে আমাদের অভিযান চলেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তেল নিয়ে কোনো ধরনের নৈরাজ্য মেনে নেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, আগামী ৫ মে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে তেলের দাম সমন্বয় করা হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২২
এসএমএকে/এমজেএফ