ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রফতানি বাড়াতে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজ করার সুপারিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২
রফতানি বাড়াতে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজ করার সুপারিশ

ঢাকা: উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে রফতানির ক্ষেত্রে বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত শুল্ক মুক্ত সুবিধা হারাবে৷ এজন্য রফতানি বাড়াতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন চুক্তি অনুসারে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজতর করা ও পণ্য খালাস দ্রুততর করার জন্য কর্মপদ্ধতি আধুনিকায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।

শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাল্টিপারপাস হলে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ ও ট্যারিফ যৌক্তিকরণ সংক্রান্ত সাব-কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জাতীয় কর্মশালায় এ সুপারিশ করা হয়।

অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় কর্মশালায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অংশীজনদের পক্ষে এফবিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বিজিএমই সভাপতি ফারুক হাসান বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও বিশেষজ্ঞ/গবেষকদের পক্ষে বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন ও পিআরআই-এর চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার বক্তব্য রাখেন।

এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বক্তব্য রাখেন।

প্রসঙ্গত, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পরবর্তীতে বাংলাদেশকে যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে তার প্রস্তুতি, পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও মনিটরিং বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির কাজে সহায়তার জন্য গঠিত বিষয়ভিত্তিক ৭টি সাব-কমিটির মধ্যে একটি হচ্ছে ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ ও ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ’ বিষয়ক সাব-কমিটি।

বক্তারা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে রফতানির ক্ষেত্রে বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত শুল্ক মুক্ত সুবিধা হারাবে এবং আমাদের রফতানি পণ্যের জন্য পারফর্মেন্স হ্রাস পাবে। তাই রফতানি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) অথবা প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) সম্পাদন করতে হবে। এরূপ বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের ফলে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। একই সঙ্গে রফতানিতে বর্তমানে প্রদত্ত নগদ প্রণোদনা ও ভর্তুকির মধ্যে যেগুলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় সেগুলো ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে তার পরিবর্তে বিকল্প উপায়ে রফতানিকে উৎসাহিত করার পন্থা উদ্ভাবন করা প্রয়োজন।

এ সাব-কমিটি স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের বেলায় সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গৃহীতব্য কার্যক্রম সম্পর্কে যে খসড়া সুপারিশমালা প্রণয়ন করেছে, তা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কাছে উপস্থাপন এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় কর সংক্রান্ত বিধি-বিধান ও পদ্ধতি সংস্কার বিষয়ে উপস্থাপনা করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর নীতি) ড. সামস উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, কর ব্যয় সংক্রান্ত গবেষণা সম্পাদনের মাধ্যমে কর অব্যাহতির অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে। রাজস্ব প্রশাসনে অটোমেশন ও ডিজিটাইজেশনের ব্যাপ্তি বৃদ্ধির ওপরও বিশেষ জোর দেওয়া হয়। রাজস্ব আহরণ সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের (যেমন, নতুন কাস্টমস আইন ও নতুন আয়কর আইন) ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার সুপারিশও করা হয়।

জাতীয় কর্মশালায় ‘কর সংক্রান্ত বিধি-বিধান এবং পদ্ধতি সংস্কার’ বিষয়ক স্টাডি গ্রুপ তাদের উপস্থাপনায় কর ব্যয় ট্যাক্স এক্সপেনডিচার সংক্রান্ত গবেষণা সম্পাদনের মাধ্যমে কর অব্যাহতির অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে। রাজস্ব প্রশাসনে অটোমেশন ও ডিজিটাইজেশনের ব্যাপ্তি বৃদ্ধির ওপরও বিশেষ জোর দেওয়া হয়। রাজস্ব আহরণ সংশ্লিষ্ট আইনগুলোর (যেমন, নতুন কাস্টমস আইন ও নতুন আয়কর আইন) ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন চুক্তি অনুসারে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজতর করা ও পণ্য খালাস দ্রুততর করার জন্য কর্মপদ্ধতি আধুনিকায়নের সুপারিশ করা হয়।

ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ বিষয়ে উপস্থাপনা করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক নীতি) মো. মাসুদ সাদিক। তিনি জানান, যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে আরোপিত কাস্টমস শুল্ক ডব্লিউটিও-এর বন্ড ডিউটি হার সীমা অতিক্রম করেছে সেগুলোর ক্ষেত্রে শুল্ক হার উক্ত সীমার মধ্যে নিয়ে আসা, যেহেতু মিনিমাম ইমপোর্ট প্রাইস ব্যবস্থা ডাব্লিউটিও এগ্রিমেন্ট অন কাস্টমস ভ্যালুয়েশনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, সে কারণে আলোচ্য মিনিমাম ইমপোর্ট প্রাইসকে পর্যায়ক্রমে ফেইজ-আউট করা। পর্যায়ক্রমে আমদানি পর্যায়ে প্রযোজ্য প্যারা-ট্যারিফ এবং সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করা।

রফতানি প্রণোদনা বিষয়ে উপস্থাপনা করেন অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আরফিন আরা বেগম। তিনি জানান, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বর্তমানে নগদ সহায়তা দিতে কোনো অসুবিধা না হলেও উত্তরণ পরবর্তীতে শিল্প পণ্যের রফতানির ক্ষেত্রে তা দেওয়া যাবে না। এছাড়াও, বর্তমানে রফতানি প্রণোদনা/ নগদ সহায়তা প্রাপ্ত খাতগুলোয় স্থানীয় মূল্য সংযোজনের যে শর্ত রয়েছে তা বাদ দিতে হবে। এ স্টাডি গ্রুপ রফতানি প্রণোদনা প্রদান করেনা এমন একটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের রফতানি চিত্রের তুলনামূলক পর্যালোচনা করে দেখেছে যে, রফতানিতে নগদ সহায়তা না থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাবের মাত্রা কম হবে। তবে, যেহেতু নগদ প্রণোদনা প্রত্যাহার করা হলে রফতানি খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে, সে কারণে বিকল্প কি ব্যবস্থা/ কার্যক্রম নেওয়া যায় তা এ স্টাডি গ্রুপ পর্যালোচনা করে দেখছে।

কর্মশালায় আরও জানানো হয়, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পথ মসৃন করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রফতানিকারক, আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ও গবেষকদের বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়া জরুরি। বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ ও ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ’ সাব-কমিটির নেওয়া কার্যক্রম বিষয়ক সুপারিশমালা চূড়ান্ত করার কাজে জাতীয় কর্মশালায় অংশীজনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২২
জিসিজি/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।