ঢাকা: সেপ্টেম্বরে রফতানি আয়ের পাশাপাশি কমেছে প্রবাসী আয়ও। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস (জুলাই-আগস্ট) দুই বিলিয়ন করে রেমিট্যান্স এলেও সেপ্টেম্বরে তা কমে দেড় বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, বাংলাদেশি মুদ্রায় (১ ডলার ১০৭ দশমিক ৫০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৪৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
রোববার (০২ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সেপ্টেম্বরে দেশে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ আগের সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার বা ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। অন্যদিকে, সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আগের মাস আগস্টের চেয়ে ৪৯ কোটি ৭৩ লাখ ডলার কম। গত আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।
সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্সের পাশাপাশি কমেছে রফতানি আয়ও। সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন দেশে ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ ডলার (৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার) পণ্য রফতানি করেছেন উদ্যোক্তারা। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বররে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স ২৪ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১২৬ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার এসেছে। এছাড়াও বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬১ লাখ মার্কিন ডলার এবং বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৪১ মার্কিন ডলার।
বরাবরের মতো এবার বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এই ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসীরা ৩৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। এরপর সিটি ব্যাংকে এসেছে ১১ কোটি ২৮ লাখ ডলার, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ১০ কোটি ৭২ লাখ ডলার, অগ্রণী ব্যাংকে ৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংকে এসেছে ৭ কোটি ৯২ লাখ ডলার প্রবাসী আয়।
অন্যদিকে, বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক আল-ফালাহ, হাবিব ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।
এদিকে, নতুন অর্থবছরের ডলার সংকট তীব্র আকার ধারণ করলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে নতুন আশার সঞ্চার করেছিল। বিদায়ী অর্থবছর রেমিট্যান্স নিয়ে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল নতুন অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই তা অনেকটাই কেটে যায়। বিশেষ করে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসীরা ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বা ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। আগস্টে তা কিছুটা কমে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ (২ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার) ডলারে নেমে আছে। সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসে তা কমে মাত্র ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলারে নেমে আসে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১ হাজার ৬৩১ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বিদায়ী ২০২১ সালে প্রবাসীরা রেকর্ড ২ হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে, ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২২
এসএমএকে/এমজেএফ