সুপ্রাচীনকাল থেকে প্রাচুর্য প্রদর্শন এবং অর্থনৈতিক লেনদেনে গুরুত্ব আছে স্বর্ণের। স্বর্ণকে বলা হয় অর্থের সবচেয়ে স্থায়ী রূপ।
স্বর্ণ বিরল
হাজার হাজার বছর আগে স্বর্ণ সহজলভ্য ছিল। অনেক প্রাচীন সংস্কৃতি মাটিতে কিংবা পানির স্রোতে স্বর্ণের সন্ধান পেয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে স্বর্ণের খনির সন্ধান পাওয়ায় স্বর্ণের প্রতুলতা বাড়ে। কিন্তু তারপরও এটি একটি বিরল ধাতু। কারণ এই ধাতুর সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবী সৃষ্টির সময়। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৭৯। এতে ৭৯টি প্রোটন, ৭৯টি ইলেকট্রন ও ১১৮টি নিউট্রন রয়েছে। মানুষের পক্ষে এই ধাতু সৃষ্টি অসম্ভব।
স্বর্ণের সৃষ্টি
মহাকাশে হলুদাভ বা উজ্জ্বল হলুদ রঙয়ের নক্ষত্র- যাদের বলা হয় সুপারনোভা। এই সুপারনোভার বিস্ফোরণের কারণেই মহাবিশ্বে স্বর্ণের সৃষ্টি। সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর স্বর্ণ বায়বীয় আকারে ছিল। পরে সৌরজগৎ গঠনের সময় তা একত্রিত হয়- এভাবেই পৃথিবীতে স্বর্ণের আগমন। তবে নতুন করে স্বর্ণের সৃষ্টির জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন, এজন্য স্বর্ণ একটি বিরল ধাতু।
স্বর্ণ আকর্ষণীয়
পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও লোভনীয় ধাতুগুলোর একটি স্বর্ণ। এ কারণেই স্বর্ণ দিয়ে গহনা বানানো হয়ে থাকে। পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলোতে স্বর্ণে সজ্জিত উপাসনাগার দেখা যায়। প্রাচীন মিশর থেকে প্রাচীন চীন পর্যন্ত সব সংস্কৃতির একটি অংশ ছিল স্বর্ণ।
স্বর্ণ অক্ষয়
স্বর্ণের ক্ষয় হয় না। এজন্যই সৃষ্টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত যত স্বর্ণ আহরিত হয়েছে তা এখনো টিকে আছে। হাজার বছর ধরেও স্বর্ণ ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখে। এটি অক্সিজেনের সাথে প্রতিক্রিয়া করে না, তাই এতে কখনোই মরিচা ধরে না এবং ক্ষয়ও হয় না। তবে শুধু হাইডোক্লোরিক এসিড এবং নাইট্রিক এসিডের মিশ্রণ স্বর্ণে পরিবর্তন আনতে পারে।
ভাঙা সহজ এবং পরিবহনযোগ্য
স্বর্ণকে ভেঙে ফেলা খুবই সহজ এবং এটি যে কোনো অবস্থাতেই মূল্যবান। লেনদেনের জন্য এটিকে ভেঙে ছোট ছোট টুকরোতে পরিণত করলেও এর মূল্য একই থাকবে। যেখানে কাগজের মূদ্রা ছিড়ে গেলেই আর মূল্য থাকে না।
সহজে বিক্রয়যোগ্য
স্বর্ণের বাজার সবসময়ই চাঙা থাকে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে চাহিদা থাকায় এটি সহজেই বিক্রি করা যায়। ভারত এবং চীনে স্বর্ণের ক্রেতা সবচেয়ে বেশি।
স্বর্ণে বিনিয়োগ দেউলিয়া করে না
তিন হাজার বছরের বেশি সময়ের ইতিহাস বলছে, স্বর্ণ কখনো শূন্যে পরিণত হয় না। স্বর্ণ দখলের জন্য দলিলের প্রয়োজন হয় না। স্বর্ণে বিনিয়োগ কখনো কাউকে দেউলিয়া করবে না, যদি না তা হাত ছাড়া না হয়।
উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর প্রাথমিকভাবে স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। ২০২২ এর শুরুতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল এক হাজার ৮০০ ডলার। তবে মার্চ মাসে এর দাম বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৪৩ ডলারে। ২০২০ সালে করোনার সময়েও স্বর্ণের দাম বাড়তে দেখা গেছে। তখন প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় সর্বোচ্চ দুই হাজার ৭০ ডলার।
স্বর্ণের দাম উঠা-নামার কারণের মধ্যে অন্যতম মার্কিন ডলারের দাম, ভূ-রাজনীতি এবং চাহিদা ও যোগান। স্বর্ণের দাম প্রভাবিত হলেও এর মূল্য কখনো একেবারে নেমে যায় না। তাই বৈশ্বিক অর্থনীতির এই ভয়াবহ মন্দার সময়ে স্বর্ণে বিনিয়োগ হতে পারে নিরাপদ ও লাভজনক।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২২