ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জরুরি পণ্য আমদানিতে ডলারের জোগান দেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২২
জরুরি পণ্য আমদানিতে ডলারের জোগান দেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা: দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমলেও খাদ্যপণ্য আমদানিতে ডলারের জোগান দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রয়োজনীয় খাদ্য, সার ও জ্বালানি আমদানি নিশ্চিত করতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রোববার সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশের বেশিরভাগ ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত ডলার নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ২৫ অক্টোবরের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, দেশের অন্তত ২০টি ব্যাংকের কাছে এলসি দায় মেটানোর মতো কোনো ডলার নেই। আমদানি দায় পরিশোধ করতে গিয়েই ঘাটতিতে পড়েছে এসব ব্যাংক। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় থেকে সংগৃহীত ডলার দিয়েও নিজেদের আমদানি দায় ও গ্রাহকদের বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এ কারণে আমদানির নতুন এলসি খোলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো।

এমনকি অনেক ব্যাংক খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলাও বন্ধ রেখেছে বলে জানা গেছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ‘সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি পর্যালোচনার লক্ষ্যে মতবিনিময়সভায়’ সর্বশেষ অর্থনৈতিক ও জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এই বৈঠকে দেশের সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা এবং আইএমএফের ঋণ ও সুদহার নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানায় বৈঠকে উপস্থিত এক নির্ভরযোগ্য সূত্র। বাজেট বাস্তবায়ন করতে ভর্তুকির চাপে আছে সরকার। সে জন্য ভর্তুকি বাবদ ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশনাও এসেছে সরকারপ্রধানের কাছ থেকে। এ জন্য বিলাসী পণ্য আমদানি কমানোসহ প্রবাস আয় বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, খাদ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, অর্থ শিল্প ও বাণিজ্যসচিব, পরিসংখ্যান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বৈঠকে অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে রিজার্ভের বর্তমান অবস্থা, আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্সের বিষয়গুলো বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে বৈঠকের ব্যাপারে অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এর আগে গত ২৬ অক্টোবর শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ব্যাংকগুলোতে ঋণপত্র (এলসি) খোলা সহজ করতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছিলেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে বাজেট সহায়তা হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে চাওয়া সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। সেখানে এই ঋণ পেলে কী সুবিধা হবে, না পেলে কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে মুখ্য সচিব আইএমএফের ঋণ পাওয়া না পাওয়ার সুবিধা সম্পর্কে জানতে চান। এর জবাবে বলা হয়, আইএমএফের ঋণ পেলে অন্যান্য সংস্থার ঋণ পাওয়ার পথ সহজ হবে। যদি কোনো কারণে ঋণ না পাওয়া যায় বা তারা দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও জাইকা থেকে প্রত্যাশিত ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। এসব ঋণ না পেলে চলতি বছরের ঘাটতি বাজেট পূরণ করা সম্ভব হবে না।

এ ছাড়া বর্তমানে ব্যাংকের ঋণে সুদহারের সীমা তুলে নেওয়ার বিষয়ে মতামত জানতে চান মুখ্য সচিব। এর জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সুদহার তুলে দেওয়ার বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন বলে জানায় একটি সূত্র। আড়াই বছর আগে দেশের ব্যাংকিং খাতে একক সংখ্যার সুদহার আরোপ করা হয়। আমানতে ৬ এবং ঋণে ৯ শতাংশ করা হয় সুদহার। ঋণ দেওয়ার অন্যতম শর্ত হিসেবে সুদহার তুলে নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে আইএমএফ। সুদহার না তুললেও একক সংখ্যায় না রেখে সুদহার বাড়ানোর পক্ষে কথা বলেন গভর্নর।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২২
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।