শিক্ষা হচ্ছে মনো-বিকাশের পথে যাত্রা। গত বেশ কিছুদিন ধরে সে-যাত্রা নানা কারণে বিঘ্নিত, স্থবির।
এদিকে আবার মেডিকেল কলেজগুলোর প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি উঠেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা নেমেছেন রাজপথে। এভাবে একটার পর একটা নেতির ঢেউ আছড়ে পড়ছে শিক্ষাঙ্গনে। স্মরণকালের মধ্যে শিক্ষাঙ্গন এমন সার্বত্রিক আন্দোলন-সঙ্কটে পড়েনি। দ্রুত সমাধানের লক্ষণও চোখে পড়ছে না। ঈদের পর অবস্থা আরো খারাপ হবার আশঙ্কাই প্রবল। প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে। অর্থমন্ত্রীও এক মাসের জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন। আগামী এক মাসেও সমস্যার সমাধান হবার আশা তাই খুব ক্ষীণ।
এমনিতেই জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত টানা তিনটি মাস বিএনপি-জামায়াতের ‘আগুন-বোমার আন্দোলনে’ বন্ধ ছিল অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্লাস হয়নি। এসএসসি পরীক্ষাও হয়েছে বিঘ্নিত। ঘোষিত সময়ে কোনো বিষয়ের পরীক্ষাই হয়নি। এরপর এলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের ওপর ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে আন্দোলন। এর ইতিবাচক সমাধান হয়েছে। ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভায় অষ্টম পে-স্কেল অনুমোদনের পর শুরু শিক্ষকদের আন্দোলন। গত প্রায় এক মাস ক্লাস-পরীক্ষা কম-বেশি বিঘ্নিত। ঈদ শেষে আরও একটি মাস যদি আন্দোলন চলে, তাহলে? উচ্চশিক্ষা স্তরে সৃষ্টি হবে সেশনজট। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে যেনতেনভাবে সিলেবাস শেষ করে ছাত্রছাত্রীদের বসাতে হবে পরীক্ষায়। বিঘ্নিত হবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। ব্যাহত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও। সব মিলিয়ে এক লেজেগোবরে অবস্থা।
অচলাবস্থার দায় আমলা-সচিব-মন্ত্রী সবারই কমবেশি। এর পেছনে আছে সমস্যা জিইয়ে রাখার একগুঁয়ে মানসিকতা ও অদূরদর্শিতা। সমস্যার সমাধান না করে তা আরো জটিল করাই যেন প্রথা। কারো কারো বেফাঁস, অহসহিষ্ণু মন্তব্য সমস্যার জট আরো বাড়িয়েছে। এসব নেতির ধকলটা গিয়ে পড়ছে মূলত শিক্ষার্থীদের ওপর। তারা যেন গিনিপিগ। এসবের ফলে জাতির মেধা-মননের ক্ষেত্রটি হয়ে পড়বে রুগ্ন, সংকুচিত ও নড়বড়ে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, নতুন পে-স্কেলে কেবল শিক্ষা ক্যাডারই নয়, ২৬টি ক্যাডারের কর্মকর্তারাও বঞ্চিত হয়েছেন। তবে সবচেয়ে বঞ্চিত শিক্ষকরা। বৈষম্যের শিকার হওয়ার পাশাপাশি অসম্মানিতও বোধ করছেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবীণ শিক্ষক দু:খের সঙ্গে বলেছেন:
‘‘পে-স্কেলে যা শিক্ষকদের জন্য ঘোষণা হয়েছে, তা সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি। আমরা কেউ কারো প্রতিপক্ষ নই। প্রশাসনে যিনি আছেন, তিনি আমারই ছাত্র। ...দেশ কেবল প্রশাসন আর পুলিশের লোকজনই চালান না। বিসিএসের বাকি ক্যাডারসহ ২২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীরই অবদান আছে। যিনি নিয়মিত পদোন্নতি পান না, সিলেকশন গ্রেড আর টাইমস্কেলই তার ক্ষত পূরণের ব্যবস্থা। এটুকুও কেড়ে নেয়া উচিত হবে না। ’’
সমস্যার দ্রুত সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ চেয়ে তিনি বলেছেন, ‘নইলে শিক্ষার সর্বনাশ হয়ে যাবে। ’ এমনটা হোক আমরা চাই না। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ‘প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে গেছেন’। এটাই বলতে গেলে এখন একমাত্র ‘সিলভার লাইনিং’। প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে আর অর্থমন্ত্রীও যাবেন এক মাসের জন্য---তাই সমাধানটা কী করে হবে কেউ জানে না। তবু আশাই ‘‘একমাত্র ভেলা’’। এছাড়া আঁকড়ে ধরার মতো কিছু আর এ-মুহূর্তে কিছু আর নেই। যাকে বলে ‘‘হোপ অ্যাগেইন্সট হোপ’’। তবু কিছু একটা হোক, অচলাবস্থা কাটুক। শিক্ষা চলুক তার স্বাভাবিক ছন্দে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৫
জেএম