ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সম্পাদকীয়

বিশেষ সম্পাদকীয়

নারীর প্রতি বৈষম্যময় আইনের সংস্কার চাই

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
নারীর প্রতি বৈষম্যময় আইনের সংস্কার চাই

জাতিসংঘের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের নানা ইতিবাচক অগ্রগতি গোটা বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি এতো বেশি ও দ্রুত যে, বেশকিছু সূচকে তা পাশের দেশ ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে।

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, নারীশিক্ষা, আয়ুষ্কাল বৃদ্ধিসহ বেশকিছু সূচকে বাংলাদেশের সফলতা এক কথায় অভাবনীয়। এসব অর্জনের পেছনে এদেশের নারীরা নিয়ামকের ভূমিকা রেখেছেন। এসবই আশাব্যঞ্জক খবর। কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার পুরস্কারও অর্জন করেছে। এতোকিছুর পরও বাংলাদেশের নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকারের প্রশ্নে এখনো অনেক পিছিয়ে আছেন।

যে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে পুরস্কৃত করেছে, তারাই আবার বাংলাদেশের নারীদের বৈষম্যের শিকার হওয়ার দিকটি তুলে ধরেছে তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে। এটা একই সঙ্গে লজ্জা ও হতাশার। বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ এই প্রতিবেদনের কারণে। তবে প্রতিবেদনে তুলে ধরা তথ্য মিথ্যে নয়।
‘ইউএন উইমেন’ প্রকাশিত ‘প্রোগ্রেস অব দ্য ওয়ার্ল্ডস উইমেন ২০১৫-২০১৬: ট্রান্সফর্মিং ইকোনমিস, রিয়েলাইজিং রাইটস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে পৃথিবীর আটটি দেশকে ধর্মীয় ও পারিবারিক আইনের কারণে নারীদের প্রতি সবচেয়ে বৈষম্যমূলক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তালিকায় দুর্ভাগ্যক্রমে আছে বাংলাদেশের নামটিও।

তালিকাভূক্ত অন্য দেশগুলো হচ্ছে: আলজেরিয়া, মিসর, ইরান, জর্দান, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও সৌদি আরব। সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মতো মানবাধিকারহীন, নারী-নিপীড়ক রাষ্ট্রের কাতারে বাংলাদেশের নাম থাকাটা দু:খজনকই বটে। অথচ তালেবানি সন্ত্রাসকবলিত রাষ্ট্র আফগানিস্তানের নামটি তালিকায় নেই।

নানা সূচকে এগিয়ে গেলেও বৈষম্যমূলক ধর্মীয় ও পারিবারিক আইনের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিটি প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশের উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানে নারী ও পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। অথচ এসব আইনের কারণে নারীরা বিয়ে, তালাক, সম্পত্তির বণ্টনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। সংবিধানে বর্ণিত অধিকার ও বাস্তবতার মধ্যে রয়ে গেছে বিস্তর ফারাক। নারীর প্রতি বৈষম্য জিইয়ে রাখা এসব আইনের কারণে রাষ্ট্রের স্ববিরোধী অবস্থানটি স্পষ্ট। এ অবস্থাকে চলতে দেওয়া যায় না।

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওযা সত্ত্বেও এদেশে ধর্মীয় ও পশ্চাদমুখি পারিবারিক আইন দিয়েই নির্ধারিত হচ্ছে অভিভাবক ও সন্তানের মধ্যে সম্পর্ক, নারী-পুরুষের বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্বসহ বিভিন্ন বিষয়। নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে কে বেশি ‘শক্তিশালী’, তা নির্ধারণ করে এসব আইন। নারী সম্পত্তি কতটা নিয়ন্ত্রণ ও ভোগ করতে পারবে, এসব আইনে সরাসরি তা বলা আছে।

আমাদের সমাজে পরিবারে ছেলে ও মেয়েকে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার মধ্য দিয়েই নারীর প্রতি বৈষম্যের শুরুটা হয়। সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গিটাও বদলানো জরুরি। নারীর মৌলিক ও সংবিধান-স্বীকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বৈষম্যমূলক আইনগুলোর আশু সংস্কারে হাত দেওয়া আশু প্রয়োজন। নারীকে পুরুষের সমান বললেই হবে না, যেসব আইন নারীর অধিকারকে সংকুচিত করে, নারীকে অধিকারবঞ্চিত করে রাষ্ট্রকে সেইসব আইনের বদল ঘটিয়ে যুগোপযোগী আইন প্রণয়নে হাত দিতে হবে। নিদেনপক্ষে চাই আইনগুলোর আশু সংস্কার।

পেছন দিকে নয়, বাংলাদেশকে তাকাতে হবে সামনের দিকে। মহিলা পরিষদসহ একাধিক নারী ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান তিন দশকের বেশি সময় ধরে ধর্মীয় পারিবারিক আইন সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। আমরা আশা করবো, যুগের দিকে তাকিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো বৈষম্যমূলক আইনের সংস্কারে সচেষ্ট ও উদ্যোগী হবে। এখানে দলপ্রীতির বা কোটারি স্বার্থের ব্যাপার নেই।  

দু:খজনক হলেও সত্য যে, সম্পত্তিতে নারীদের অধিকার দিয়ে বাংলাদেশে যতবার আইন প্রণয়নের চেষ্টা হয়েছে, ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তি তাতে বাধা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারও এক্ষেত্রে বারবার এগিয়ে গিয়েও পিছু হটেছে। আর বিএনপিও রক্ষণশীল ও উগ্রপন্থীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ বলে এক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা নেতিবাচক। আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃতদানকারী দল আওয়ামী লীগ ও সরকারের কাছে এ ব্যাপারে বলিষ্ঠ ও ইতিবাচক উদ্যোগ আশা করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।