ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ছেলের সঙ্গে এসএসসি পাস, প্রশংসায় ভাসছেন তারা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২২
ছেলের সঙ্গে এসএসসি পাস, প্রশংসায় ভাসছেন তারা

ময়মনসিংহ: এবারের এসএসসি পরীক্ষায় একসঙ্গে পাস করে প্রশংসায় ভাসছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ৪৫ বছরের মো. এখলাস উদ্দিন নয়ন ও ছেলে মোহাম্মদ রায়হান (১৭)। একই ধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার শেফালী আক্তার (৩৬) ও ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদ (১৭)।

তাদের এই অদম্য সাফল্যে খুশি এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।

জানা যায়, গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য এখলাস উদ্দিন নয়ন ও তার ছেলে মোহাম্মদ রায়হান একসঙ্গে এসএসপি পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল করায় এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এ খবরে তাদের বাড়িতে এসে বাবা-ছেলেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)হাসান মারুফ। এ সময় তিনি তাদের পাশে বসিয়ে মিষ্টি তুলে দেন মুখে।

এছাড়াও তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন খানসহ আরও অনেকে।  

এ সময় তারা বলেন, লেখাপড়া যে কোন বয়সে সম্ভব- এই কথা বই-পুস্তকে থাকলেও তা বাস্তব প্রমাণ করছেন নয়ন। আশাকরি তাদের এই সাফল্যে অন্যরাও লেখাপড়ায় উৎসাহী হবে।  

অপরদিকে কৃষক বাবার অভাব-অনটনের সংসারে বড় হয়েছেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার শেফালী আক্তার (৩৬)। তাই অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় উপজেলার শিবরামপুর এলাকার নূরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে। ফলে সংসারের ব্যস্ততায় লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার সুযোগ হয়নি আর।  

কিন্তু ইচ্ছে থাকলে যে কোনো বয়সেই লেখাপড়া সম্ভব। ছেলের সঙ্গে এসএসসি পাস করে তা প্রমাণ করে দিয়েছেন তিন সন্তানের জননী এই অদম্য নারী। শুধু তাই নয়, পরীক্ষার ফলাফলে ছেলের চেয়ে এগিয়ে আছেন মা। তিনি পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৭৫ এবং ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদ পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯।

জানা যায়, উপজেলার শুশুতি বাজারের বই বিক্রেতা নূরুল ইসলামের স্ত্রী শেফালী আক্তার স্থানীয় আছিম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আর ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদ শুশুতি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী ছিল। তাদের এই সাফল্যে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা।  

দাম্পত্য জীবনে শেফালী তিন সন্তানের জননী। বড় ছেলে শাকিল হাসান মৃদুল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে অনার্স শেষ করেছেন, আর ছোট মেয়ে নুপুর স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

ভালো ফলাফলে উচ্ছ্বসিত শেফালী আক্তার বলেন, শিক্ষার কোনো বয়স নেই, চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। আমার কষ্ট স্বার্থক হয়েছে। ভবিষ্যতে আমি পড়ালেখা অব্যাহত রাখব। এ জন্য সবার দোয়া চাই।

ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদ বলে, আম্মা পাস করায় আমি বেশি খুশি হয়েছি। শত কষ্ট হলেও আমি মাকে নিয়েই লেখাপড়া চালিয়ে যাব।

শেফালীর স্বামী নূরুল ইসলাম বলেন, স্ত্রীর সাফল্যে আমি দারুণ খুশি। সে আরও লেখাপড়া করলে আমি তার পাশে থাকব।

এবিষয়ে শেফালী আক্তারের প্রতিবেশী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মমেক) চিকিৎসক হারুন আল মাকসুদ বলেন, শেফালী আক্তার ও তার ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদের ফলাফলে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। এই বয়সে শেফালী আক্তার অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করছেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এতে অন্যরাও উৎসাহ পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।