টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন পদে আত্মীয়স্বজনকে নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে জাল সনদধারীদেরও নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করে। বিভিন্ন সময়ে ওই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। ১২টি উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক, বয়স্ক সহজ কুরআন শিক্ষা, সহজ কুরআন শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে এক হাজার ৬৫০টি, মডেল রিসোর্স সেন্টার ১২টি ও সাধারণ রিসোর্স সেন্টার রয়েছে।
আরও জানা যায়, মোহাম্মদ আলী ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর টাঙ্গাইল ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে যোগদান করেন। এর আগে তিনি এ কার্যালয়ে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রকল্পে মোহাম্মদ আলী শিক্ষক, সুপারভাইজার, ফিল্ড অফিসার, মাস্টার ট্রেইনার, মডেল কেয়ারটেকার, সাধারণ কেয়ারটেকার, নিয়োগ ও শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপনে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ টাকা দিয়ে টাঙ্গাইল শহরে কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
জানা যায়, মোহাম্মদ আলী তার আত্মীয়স্বজন ও এজেন্ট নিয়োগ করে প্রতিটি উপজেলায় শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন ও জনবল নিয়োগে প্রতিটি কেন্দ্র থেকে ২৫/৩০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। মোহাম্মদ আলীর জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে তার আত্মীয় ও এজেন্টরা বিভিন্ন কেন্দ্রের দায়িত্ব নিয়ে দায়িত্ব পালন না করেই বছরের পর বছর সরকারি বেতন-ভাতা নিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ওই সব কেন্দ্রের অধিকাংশ বন্ধ থাকলেও সরকারি সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রেখে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন মোহাম্মদ আলী। তার বোন লিলি আক্তার কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে, শ্যালিকা সেলিনা খান ও শ্যালিকার জা (স্বামীর ভাইয়ের স্ত্রী) তাসলিমা আমিনবাগ কেন্দ্র, শ্যালক জয়নাল আবেদীন সদর উপজেলার গালার দায়িত্বে, তার মেয়ের বান্ধবীর বোন সদরের বয়স্ক কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছেন। শহরের পীরবাড়ী মক্তব কলেজপাড়ার মিজানুর রহমানকে জাল সনদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এমনকি তার স্ত্রী কালিহাতীর ফটিকজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরির সুবাদে ওই বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্ত্রীকে একটি কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যার কোনো শিক্ষাগত সনদ নেই। মোহাম্মদ আলীর ভাই ফারুক হোসেন গয়হাটা নাগরপুরে বয়স্ক কেন্দ্রের দায়িত্বে, খালাতো বোন সদরের কাতুলী ইউনিয়নে প্রাক-প্রাথমিক কেন্দ্রের দায়িত্বে, তার ফুপুর বাড়ি করটিয়ার আলী আকবর নামে এক ব্যক্তি একটি কেন্দ্রের দায়িত্বে, শ্বশুরের পালিত মেয়ের ঘরের নাতনিকে দাইন্যা ইউনিয়নে একটি কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে। দেলদুয়ারের পাথরাইল ইউনিয়নের চরপাড়ার রাকিব হোসেনের স্বাক্ষর জাল করে টাকা তুলে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। একই ইউনিয়নের ভুরভুরিয়া গ্রামের ফরিদ আহমেদ নামে এক জেলখাটা আসামিকেও বেতন দেওয়া হয়েছে। একই উপজেলার মাইজাল দেওলী গ্রামে তার এক আত্মীয় কোনো পাঠদান না করেও বেতনভাতা নেন।
মির্জাপুর উপজেলার পেকুয়াতে এক শিক্ষিকার সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। মির্জাপুরে বুবলিকে নামে এক শিক্ষিকা জাল সনদে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ রযেছে। টাকার বিনিময়ে বাসাইল উপজেলার মোস্তফা, এবাদত জসিমউদ্দিন, নুর হোসেনকে জাল সনদে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। উপপরিচালকের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় বাসাইলের শিখা খান নামে এক শিক্ষিকা কেন্দ্র না চালিয়েই বেতন তুলে নেন।
মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি অবসরে যাওয়ার প্রাক্কালে ২৫/৩০টি কেন্দ্র স্থগিত করে তার অনুগত এজেন্টদের মাধ্যমে টাকা নিয়ে নতুন করে ওইসব কেন্দ্রে জনবল নিয়োগের পাঁয়তারা করছেন। তিনি বিভিন্ন উপজেলায় ভিজিটের নামে প্রতি শিক্ষকের কাছ থেকে চার/পাঁচ হাজার টাকা করে আদায় করেন। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলার জন্য শিক্ষা উপকরণ কেনা ও বিতরণেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে টাঙ্গাইল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২২
এসআই