ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন

বিভক্ত নীল দল, সিদ্ধান্ত নেয়নি সাদা দল

মোরশেদ সরকার, জবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১২
বিভক্ত নীল দল, সিদ্ধান্ত নেয়নি সাদা দল

ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী ১৮ এপ্রিল। এ বিষয়ে ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে।

এ নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে অন্তত ৫ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন একচ্ছত্র আধিপত্যে থাকা  শিক্ষক সংগঠন নীল দল।

অন্যদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চুপসে থাকা সাদা দল।

উভয় সংগঠনের ঘনিষ্ঠ সূত্র বাংলানিউজকে এমন অবস্থার কথা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীল দলের এক শিক্ষক নেতা বাংলানিউজকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে নীল দলের চার জন শিক্ষক সভাপতি হতে আগ্রহী। প্রার্থীরা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় নীল দলের মধ্যে আপাতত পরিস্কার বিভক্তি
লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, সভাপতি হতে আগ্রহী শিক্ষকরা হলেন, মাইক্রোবায়োলজি ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. জাকারিয়া মিয়া, ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও সদ্য অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া ড. কাজী সাইফুদ্দীন।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের একটি বড় অংশ অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আবার প্রথমবারের নির্বাচনে সভাপতি হওয়া সহজ হবে এমন ধারণা থেকে নিজেদের যোগ্য মনে করে অন্য প্রার্থীরাও নিজেদের সমর্থক বাড়ানোর চেষ্টা করছেন ও দফায় দফায় অনুসারীদের নিয়ে গোপন বৈঠক করছেন।

সভাপতি ও অন্যান্য পদে প্রার্থিতা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়া নীল দলকে একত্রিত করার জন্য সিনিয়র শিক্ষকদের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্ত এতে বিভক্তির বিষয়টি জুনিয়র শিক্ষকদেরও নজরে চলে আসে।

তবে ওই বৈঠকের বিষয়ে নীল দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. আলী নূর কিছুই জানেন না বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন। আবার নীল দলের অনেক শিক্ষক ওই বৈঠকে উপস্থিত হননি বলেও সূত্র জানায়।

এমন বিভক্তির কারণে বাংলানিউজের কাছে হতাশা ব্যক্ত করে নীল দলের বেশ কয়েকজন শিক্ষক বাংলানিউজকে জানান, অনেক শিক্ষক আছেন, যারা হঠাৎ করে উচ্চাভিলাসী হয়ে গেছেন। এ জন্য একই নীল দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হচ্ছে।
 
তবে কোনো ধরনের বিভক্তির কথা অস্বীকার করে নীল দলের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি চাই গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন হোক। এ ব্যাপারে একই আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষকরা এক প্যানেলে নির্বাচন করবেন বলে আমি আশাবাদী। ’
এ সময় তিনি  প্রার্থী হচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন নেতৃত্বের আসনে থাকা নীল দলের আহবায়ক ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আলী নূর বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা চাই নীল দলের শিক্ষকদের নিয়ে একটি প্যানেলে নির্বাচন করতে। আশা করি, একই আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষকরা প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে অত্যন্ত শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন। ’

তবে সংগঠনের স্বার্থে ব্যক্তিগত ভাবে তিনি প্রার্থী হতে আগ্রহী নন এমন দাবি করেন। তবে কোনো অবস্থাতেই প্রার্থী হবেন না, এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি।

তবে নীল দলের শিক্ষকদের একই ছাতার তলে আনতে সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে আগামী ৯ এপ্রিল এক বৈঠক আয়োজন করা হবে বলে নীল দলের এক শিক্ষক নেতা জানিয়েছেন।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে নীল দলের শিক্ষকদের দাপটে চুপসে থাকা সাদা দলের শিক্ষকরা সরাসরি কোনো সক্রিয়তা দেখাননি। তবে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে তাদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছে বলে সাদা দলের শিক্ষকদের সূত্র জানিয়েছেন।

বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় এ নির্বাচনে তারা তাদের অস্তিত্বের জানান দিতে চান বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের শিক্ষক নেতা বলে পরিচিত ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমরা সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে দেখছি, আমরা নির্বাচনে অংশ নেবো কি না। তবে আগামী ৯ এপ্রিল সাদা দলের একটি বৈঠক আয়োজনের কথা রয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো বলে আশা করি। ’  

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাসনা হেনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, তফসিল অনুযায়ী চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ৩ শ’ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ১০ ও ১১ এপ্রিল মনোয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানের তারিখ নিধারণ করা হয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশের তারিখ আগামী ১৫ এপ্রিল বলে জানান তিনি।

নির্বাচনের প্রার্থীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। ’ তবে সাধারণত একই আদর্শের শিক্ষকরা প্যানেল ভিত্তিক নির্বাচন করে থাকেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১২

এমএমএস
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।