ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

রাবির শিক্ষার্থীদের বাকি খাইয়ে নিঃস্ব, হোটেল বন্ধ করলেন বাবু

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
রাবির শিক্ষার্থীদের বাকি খাইয়ে নিঃস্ব, হোটেল বন্ধ করলেন বাবু বাবুর হোটেল।

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে একটি খাবারের দোকান চালিয়ে আসছিলেন মানিক হোসেন বাবু। রাবির শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ‘বাবু ভাই’ নামে পরিচিত।

 শিক্ষার্থীদের কাছে প্রায় তিন লাখ টাকা বাকি পড়ে আছে বাবুর। অনেক টাকা বাকি পড়ায় বুধবার (২১ ডিসেম্বর) তিনি হোটেলটি বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। পাঁচ দিন ধরে দোকান বন্ধ রেখে অন্যের ধারের টাকায় সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

বাবুর অভিযোগ, বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। বাবুর দোকানটিতে প্রায় ছয়টি হলের শিক্ষার্থীরা খাবার খেতেন।  

মানিক হোসেন বাবুর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের মেহেরচণ্ডী এলাকায় থাকেন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে খাবারের দোকান চালিয়ে আসছেন।

হঠাৎ দোকান বন্ধের বিষয়ে মানিক হোসেন বাবু বাংলানিউজকে বলেন, করোনার পর থেকে বাকির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগের সম্মেলনের কারণে আরও বেড়ে যায়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলেন সম্মেলনের পরে টাকা দেবেন। কিন্তু সম্মেলন স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর তারা আর কেউ টাকা দিচ্ছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে আমি দোকান বন্ধ রেখেছি। এখন আমার কাছে কোনো টাকা-পয়সা নেই। ধারদেনা করে চলছি।

বাবু বলেন, শিক্ষার্থীরা বাকি খাওয়ার পর টাকা চাইলে বলেন সামনের মাসে দেবো, বাসায় সমস্যা। নিজের টাকা দিয়ে এত দিন দোকান চালিয়েছি। কিন্তু সে টাকাও ফুরিয়ে গেছে, হোটেলের বাজার করতে পারছি না।

বাকিতে খাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী দাবি করে বাবু বলেন, বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রলীগের ছেলেপেলেরাই বেশি। সাধারণ শিক্ষার্থীও আছে। তবে ৯০ শতাংশ ছাত্রলীগ। তবে করোনার আগে এবং পরে মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকার ওপরে বাকি। এক নেতার কাছে ২৯ হাজার টাকা পাবো।

দোকানদার বাবু বলেন, আমার দোকানে ১৩ জন কর্মচারী রয়েছে। তাদের দৈনিক ৪-৫ হাজার টাকা দেওয়া লাগে। কিন্তু বাকি বিক্রি করে লাভের বদলে লোকসান গুনতে হচ্ছে। ঠিকমতো কর্মচারীদের মজুরি দিতে পারিনি। শিক্ষার্থীদের বাকি খাওয়াতে গিয়ে যেখানে হোটেলের জন্য বাজার করি সেখানেও আমার অনেক টাকা বাকি হয়ে গেছে। দোকানে যারা খায় আমি তো তাদের কখনো না বলি না। শিক্ষার্থীদের কাছে আমার দাবি, এই অভাবের সময় বাকির টাকা যেন পরিশোধ করে দেয়। আমি আবার নতুন করে ব্যবসাটা শুরু করতে চাই।

এ বিষয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, বাবু ভাইয়ের মতো লোকের দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি শিক্ষার্থীদের সব বিপদে পাশে থেকেছেন। কিন্তু তার অসময়ে কেউ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে এটি আমাদের জন্য লজ্জার। সবার উচিত বাবু ভাইয়ের বিপদে পাশে থাকা।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে বাকি খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে কে খেয়েছেন আর কে বাকি রেখেছেন, এটা আমার জানা নেই। এত টাকা বাকি তিনি কেন দিলেন সেটিও আমার বোধগম্য নয়। তবে ওই খাবারের দোকানের মালিক এ বিষয়ে আমাদের জানালে ছাত্রনেতা হিসেবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তার বাকি পড়ে যাওয়া টাকাগুলো তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।