লালমনিরহাট: সব বিল তোলার তিন বছরেও কাজ শুরু হয়নি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার আফসার উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাচীর নির্মাণ।
জানা গেছে, উপজেলা সদরের টংভাঙ্গা ইউনিয়নের গেন্দুকোরী এলাকার শিক্ষার মান উন্নয়নে ১৯৯৯ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে আফসার উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিশাল জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রাচীর না থাকায় খেলার মাঠে এক পাশের প্রায় ৩৩ শতাংশ জমি দখল করে বাড়ি আর মার্কেট করেছেন স্থানীয় আতাউর রহমান মিন্টু। বাকি অংশেও রাখা হয় খড়ের গাদা আর সুযোগ মতো রাখা হয় বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। শুধু তাই নয়, প্রাচীর না থাকায় বিদ্যালয়ের সামনের অংশ অঘোষিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। ফলে লেখাপড়ার পরিবেশটাই নষ্ট হতে বসেছে বিদ্যালয়টিতে।
বিষয়টি অনুধাবন করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধের পরে গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন তহবিলের (এডিপি) আওতায় বিদ্যালয়টির প্রাচীর নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এরজন্য তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় উপজেলা প্রকৌশল দফতর।
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকৌশল দফতর জানায়, ২০২০ সালের ২৪ জুন দরপত্র আহ্বান করে বিদ্যালয়টির প্রাচীর নির্মাণে তিন লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। এ কাজটি পান রংপুর সদরের সরোয়ার জাহান নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ কাজটি কিনে নিয়ে সম্পন্ন করার দায়িত্ব নেন স্থানীয় ঠিকাদার মোর্শেদ। সংক্ষিপ্ত সময়ে দরপত্র আহ্বান করায় অর্থ বছর শেষ হওয়ার আগেই বিল তুললে দরপত্র আহ্বানের দু’দিন পরই সমুদয় বিল তুলে বিডি করে রাখা হয়।
দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ২ আগস্ট কাজ সমাপ্ত করার কথা ছিল। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছরেও কাজ শুরু হয়নি। এরই মধ্যে তিনটি অডিটও সম্পন্ন হয়েছে উপজেলা প্রকৌশল দফতরের। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে কোনো অডিটই আপত্তি জানাতে পারেনি। এ প্রকল্পের কোনো ফাইলও দেখাতে পারেনি প্রকৌশল দফতর।
তবে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সুমেন চন্দ্র বর্মন বাংলানিউজকে বলেন, প্রাচীর না থাকায় একদিকে জমি জবর দখল হচ্ছে, অন্যদিকে ট্রাক-বাস রাখায় খেলাধুলাও মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকছে। এছাড়া খোলা মেলা থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বিশেষ করে মেয়েরা শরীর চর্চায় অনিহা প্রকাশ করে।
তাই প্রাচীর নির্মাণের আবেদন করা হয়েছে। তিন বছর আগে প্রকল্প নিয়ে তার সমুদয় বিল পরিশোধ করলেও কাজই শুরু হয়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বা প্রকৌশল দফতরের কেউ আসেননি। নিজে থেকে তিন বছর ধরে ঘুরছি, কোনো কাজই হচ্ছে না। এ মাস ও মাস বলেই তিন বছর কাটিয়ে দিয়েছে। এখন নিরাশ হয়ে প্রকৌশল দফতরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি, বলেন প্রধান শিক্ষক।
তবে ঠিকাদারের প্রতিনিধি মোর্শেদ বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক দিন কাজ করতে গিয়েছি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক কাজ করতে দেননি। তাই কাজটি করা হয়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী নজীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, আপনার ফোনে মনে হয়েছে। তাই বিদ্যালয়টির সভাপতি স্থানীয় এমপির ছেলে মাহমুদুল হাসান সোহাগ সাহেবের সঙ্গে কথা বললাম। তিনি রোববার বিদ্যালয়ে যেতে চেয়েছেন। তাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে কাজটি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হবে। সমুদয় বিল তোলা হলেও টাকা আত্মসাৎ হয়নি। বিডি করে রাখা আছে।
তবে বিডি দেখতে চাইলেও এ প্রতিবেদককে তিনি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিল উত্তোলন করে বিডি আকারে নিজের জিম্মায় তিন বছর রাখার নিয়ম আছে কি না জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেননি উপজেলা প্রকৌশলী।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নতুন এসেছি, তিন বছর আগের বিষয় আমার জানার কথা নয়। তবে তিন বছরেও কাজ শুরু না হওয়া দুঃখজনক। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
এসআই