ঢাকা: উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় গতবারের চেয়ে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ কমলেও এ ফলাফলকে স্বাভাবিকের তুলনায় ‘ভালো’ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। গেল বছর করোনার ধকল কাটতে না কাটতেই আকস্মিক বন্যায় পিছিয়ে যাওয়া পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে পরীক্ষা না নিয়ে এইচএসসি ও সমানের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। তাতে অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার নম্বর থেকে তাদের মূল্যায়নে পাসের হার আসে শতভাগ।
ওই বছর পরীক্ষা না নিয়ে মূল্যায়ন করার কারণে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্য করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় ২০২১ সালে মাত্র তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। তাতে উত্তীর্ণের হার ছিল ৯৫ দশমকি ২৬ শতাংশ।
এদিকে ২০২০ সালের আগের বছরগুলোর ফলের চেয়ে এবছরের ফলকে স্বাভাবিকের তুলনায় ভালো বলছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার।
তার ভাষ্য, ২০২১ সালে এইচএসসিতে মাত্র তিন বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছিল, সে কারণে ওই বছর পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেশি ছিল। এবছর ১২ বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে, বিষয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পাসের হারও কমেছে।
২০১৮ ও ২০১৯ সালের তুলনায় পাসের হার বেশি উল্লেখ করে তপন কুমার বলেন, এতে দেখা যাচ্ছে স্বাভাবিকের তুলনায় এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার বেশি।
২০২২ সালসহ আগের পাঁচ বছরের পাসের হারের একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে দেখা যায়, ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, ২০২০ সালে ১০০ শতাংশ, ২০২১ সালে ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং সবশেষ ২০২২ সালে ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
সাধারণ বোর্ডগুলোর মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮১ দশমিক ৬০ শতাংশ, কুমিল্লায় ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশ, যশোরে ৮৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ, বরিশালে ৮৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, সিলেটে ৮১ দশমিক ৪০ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৯ দশমিক ০৮ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৮০ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর মাদ্রাসা বোর্ডে ৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বন্যা কবলিত হলেও রাজশাহী, সিলেট ও দিনাজপুরের ফলে তাতে খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।
যে বোর্ডগুলোতে পাসের হার কম সে বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি তপন কুমার সরকার বলেন, একেক বোর্ডের প্রশ্ন একেক রকম হয়। সে কারণে পাসের হার ভেরি করে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি পরীক্ষার্থী আইসিটি বিষয় ছাড়া ২০২২ সালের পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে দুটি আবশ্যিক, তিনটি নৈর্বাচনিক ও একটি চতুর্থ বিষয়সহ মোট ১২ পত্রে পরীক্ষায় অংশ নেয়। আইসিটি বিষয়ের নম্বর এসএসসি বা সমমান এবং জেএসসি বা জেডিসি থেকে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এসএসসি বা সমমান থেকে ৭৫ শতাংশ এবং জেএসসি বা জেডিসি থেকে ২৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন বা অবমূল্যায়ন রোধে পরীক্ষকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এবং দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
২০২২ সালের পরীক্ষার ফলের আরও তথ্য:
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের সার-সংক্ষেপ হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। পরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি ও মাদরাসা বোর্ডের অধীনে মোট ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। এরমধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন। পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন।
২০২১ সালে মোট পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, গতবারের তুলনায় পাসের হার কমেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন এবং ২০২২ সালে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ছিল এক লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। জিপিএ-৫ কমেছে ১২ হাজার ৮৮৭ জন। এবার ছাত্রের চেয়ে ১৫ হাজার ১৬০ জন ছাত্রী বেশি পাস করেছে।
মোট দুই হাজার ৬৩৭টি কেন্দ্র ও নয় হাজার ১৩৯টি প্রতিষ্ঠানে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হয়। গতবারের তুলনায় প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ২৮টি ও কেন্দ্র বেড়েছে ১৬টি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৩
এমআইএইচ/আরআইএস