ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন দৈনিক মজুরিভিত্তিক (ডে লেবার) কাজ করে আসা চাকরিপ্রত্যাশীরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপাচার্যের কণ্ঠসদৃশ্য শিক্ষক নিয়োগের অডিও ফাঁসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ভিসি অফিসে তালা লাগান তারা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী ও চাকরিপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাসেল জোয়ার্দ্দার উপাচার্যের কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেন।
এর আধঘণ্টা পর রাসেল জোয়ার্দ্দার ও টিটু মিজানের নেতৃত্বে প্রায় ২০জন দিনমজুর কার্যালয়ের সামনে এসে স্লোগান দিতে থাকে। তারা উপাচার্যকে উপাচার্যকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে তার অপসারণ দাবি করেন। পরে বেলা ১২টার দিকে কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখে চলে যান তারা।
তারা চলে যাওয়ার ৩০ মিনিট পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নির্দেশে গেটের তালা ভাঙা হয় এবং কার্যালয়ে পুলিশ প্রবেশ করে তল্লাশি চালায়।
এরপর উপাচার্যের কার্যালয়ে কোনো ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বা তথ্য আদান প্রদানে ব্যবহৃত কোনো গোপন যন্ত্রপাতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে ইবি থানা পুলিশ ও ডিএসবি এ তল্লাশি চালায়। এসময় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ, সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলামসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ ঘটনার পর ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও প্রশাসন ভবনের সামনে এ চিত্র দেখা যায়।
ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের বিষয়ে ইবি থাানার ওসি আন নুর জায়েদ বিপ্লব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নির্দেশে আমরা ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করেছি। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আমাদের পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছি। ’
তল্লাশি করে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছে ইবি থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সহকারী প্রক্টর ড শফিকুল ইসলামও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ফারহা জেবিন নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে তিনটি অডিও পোস্ট করা হয়। অডিওর কথোপকথনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড শেখ আব্দুস সালামের বলে দাবি করা হয়। এসব অডিওতে নিয়োগ নিয়ে ও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে উপাচার্যকে বিভিন্ন কথা বলতে শোনা যায়। তবে অডিওটিতে অন্য প্রান্তের কোনো কথা শোনা যায়নি।
অডিওতে একটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বাতিল হওয়ার কারণ ও আগামীতে বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়া সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও নিয়োগ প্রার্থীকে বিভিন্ন প্রশ্ন বলে দেওয়া হয়। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের ঘটনা নিয়ে এ আলোচনা করা হয়। অডিওতে ওই বিভাগের অলি নামের (সংক্ষিপ্ত নাম) এক শিক্ষক প্রার্থীর নাম ধরে সম্বোধন করতে শোনা যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপাচার্যের নির্দেশে ইবি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান।
অডিওতে উপাচার্যের কথোপকথনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম। একই অভিযোগে ক্ষুব্ধ ও হতাশা ব্যক্ত করে উপাচার্যের অবস্থান জানানোর দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
এসএএইচ