রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আতিফা হক শেফা নামের এক ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) এক ছাত্রীকে বন্ধুদের দিয়ে ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ইনস্টিটিউটের অভিযোগ তদন্ত কমিটি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী আতিফা হক শেফা একই ইনস্টিটিউটের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ও মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। তার বন্ধু হলেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান।
লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, কিছুদিন ধরে তিনি ইনস্টিটিউটের কয়েকজন বড় ভাইবোনের মাধ্যমে ক্রমাগত মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি ইনস্টিটিউটের এক সিনিয়র ভাইয়ের সঙ্গে রাজশাহীর মরমরিয়া বাজারে খেতে যান। সেখানে একই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান, ইতি মণ্ডল, শাহবাজ তন্ময়, আতিফা হক শেফা উপস্থিত ছিলেন। তারা সেখানে নানাবিধ অশালীন কথাবার্তা ও অপ্রত্যাশিত অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকেন। পরে তারা আরও নানাভাবে মানসিকভাবে হেনস্তা করতে থাকেন।
ওই ছাত্রী আরও উল্লেখ করেন, গত রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) তাকে ফোন দিয়ে দেখা করার জন্য আতিকুর ও আতিফা চাপ দিতে থাকেন। বাধ্য হয়ে তিনি কয়েকজন সহপাঠীকে নিয়ে বিভাগের সামনের চায়ের দোকানে যান। সেখানে তার চরিত্র নিয়ে নানা রকম গালিগালাজ ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকা অন্য সহপাঠীদেরও হেনস্তা করা হয়।
এ সময় তাকে চরিত্রহীন বলেও মন্তব্য করেন ওই ছাত্রলীগ নেত্রী। এছাড়া তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী ভুক্তভোগীকে ক্রমাগত মৌখিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
এর আগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বড় ভাইকে ডেকে নিয়ে দুজনকে নিয়ে নানা রকম বাজে কথা বলেন। এসময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বন্ধুদের দিয়ে ধর্ষণের হুমকি দেন। ওই সময় করা একটি অডিও রেকর্ড মিলেছে।
অডিও রেকর্ডে অভিযুক্ত আতিফা হক শেফাকে বলতে শোনা যায়, ‘ওকে (ভুক্তভোগী) হলে গিয়ে ধরবো। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাচের মানুষের সাথে ও (ভুক্তভোগী) ঘুরে বেড়িয়েছে। ওকে (ভুক্তভোগী) প্রোটেকশন দিলে ওর লাইফ আরও দুর্বিষহ করবো। ওরে (ভুক্তভোগী) যেখানে পাবো সেখানেই ‘....’। এবার ওরে (ভুক্তভোগী) এনে দিবো, তোরা (ছাত্রলীগ নেত্রীর বন্ধু)...। ’
অভিযোগের বিষয়ে আজ মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী আতিফা হক শেফা ও আতিকুর রহমানের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
ইনস্টিটউটের অভিযোগ তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আকতার বানু বলেন, ‘আমি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে লিখিত অভিযোগের পাশাপাশি অন্যান্য ডকুমেন্টস দিতে বলেছি। সকল ডকুমেন্টস এখনো পাইনি। পেলে আমরা দুই পক্ষের সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘আমি এখনো অফিসিয়ালি কোনো অভিযোগপত্র পাইনি। অভিযোগ পেলে, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
এসএস