ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

বগুড়ায় ‘শুভসংঘ স্কুল’ উদ্বোধন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
বগুড়ায় ‘শুভসংঘ স্কুল’ উদ্বোধন

বগুড়া: বগুড়া সদর উপজেলায় হাপুনিয়া গ্রামে শুভসংঘ স্কুলের উদ্বোধন করেছেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন।

বুধবার (০১ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে স্কুলের শুভ উদ্বোধন করা হয়।

জানা যায়, সদর উপজেলায় নিভৃত পল্লী হাপুনিয়া গ্রামে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন সহায়-সম্বলহীন রত্না দেবনাথ নামে এক নারী। তিনি নিজ উদ্যোগে ওই অঞ্চলের শিশুদের অক্ষরজ্ঞান দেওয়ার পাশাপাশি শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। এরপর আবার নতুন শিক্ষার্থী সংগ্রহ করে তাদের পাঠদানের উদ্যোগ নেন তিনি। নিজের আপনজন বলতে কেউ না থাকায় ওই এলাকার শিশুদেরই আপন করে নেন ওই নারী।

এক সময় তার এই পাঠদান কার্যক্রমে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) সহযোগিতা করলেও ২০১৯ সালে সেই সহযোগিতাও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বন্ধ হয়নি রত্না দেবনাথের পাঠদান কার্যক্রম। এনিয়ে গত বছরের আগস্ট মাসে নিজের স্বামী-সন্তান এমনকি কোনো সম্পদ না থাকার পরও শিশুদের শিক্ষার জন্য এমন নিবেদিত নারীর সংগ্রামের বিষয়টি কালের কণ্ঠ শুভসংঘের নজরে আসে। সে সময়ই রত্না দেবনাথের ওই পাঠশালার দায়িত্ব নেওয়ার উদ্যোগ নেয় শুভসংঘ। এরপর বগুড়া শুভসংঘের সদস্যরা একাধিকবার রত্না দেবনাথের পাঠশালা পরিদর্শন করেন।  

ইতোমধ্যে কালের কণ্ঠের ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বগুড়া অফিসের পক্ষ থেকে রত্না দেবনাথকে সম্মাননা দেওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম রত্না দেবনাথের সংগ্রামী জীবনীর কথা জেনে তার জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা করেন। এজন্য প্রয়োজন পড়ে একখণ্ড জমির। শুভসংঘ তার ব্যবস্থা করবে বলে ওই অনুষ্ঠানে জানায়।

কালের কণ্ঠ শুভসংঘ কেন্দ্রীয় পর্ষদ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর রত্না দেবনাথের বাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি সেখানেই একটি স্কুল পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। শুভসংঘ স্কুল নামে পরিচিত সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই পাঠদান করবেন রত্না। বুধবার সেই কাঙ্ক্ষিত শুভসংঘ স্কুলেরই উদ্বোধন করা হয়।

স্কুল উদ্বোধনের সময় কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, শুভসংঘ হচ্ছে কালের কণ্ঠের একটি সংগঠন। এর পৃষ্টপোষকতা করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। তার পৃষ্টপোষকতায় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন একটি করে স্কুল করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এছাড়া প্রতিটি জেলায় একটি করে পাঠাগার করা হবে। আমরা শিশুদের হাতে বই তুলে দিতে চাই এবং শিশুদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চাই। যে এলাকার শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, যারা স্কুলে যেতে পারছে না সেরকম জায়গায় শিশুদের একত্রিত করে আমরা স্কুল করতে চাই। ইতোমধ্যেই পাঁচটি স্কুল করা হয়েছে। তার মধ্যে এ স্কুলটিই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলো।

তিনি বলেন, এখানে আমরা শিশুদের স্কুল ড্রেস, ব্যাগ, বই সবগুলো দেবো। শিক্ষকের বেতনসহ স্কুলের যা যা খরচ সবই বহন করা হবে। এখানেই শুধু তাদের পড়ানো নয়, বরং যখন তারা হাই স্কুলে যাবে তখন তাদের মাসিক বৃত্তি দেওয়া হবে। এরপর যতদূর সে পড়তে চায় ততদূর বৃত্তি দেওয়া হবে। যেন অভাবে পড়ে কোনো শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় সেই কারণে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আমার মাধ্যমে তা কার্যকর করছেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান, ইউপি সদস্য সেকেন্দার আলী, নিশিন্দারা ফকির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক জাকারিয়া পরেভেজ, শিকারপুর-কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম পিন্টু, শিকারপুর সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোবাইদা খাতুন, সমকালের উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি লিমন বাসার, কালের কণ্ঠের বগুড়া প্রতিনিধি জে এম রউফ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার আব্দুর রহমান টুলু, নিউজ২৪ টিভির বগুড়া প্রতিনিধি আব্দুস সালাম বাবু, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের বগুড়া প্রতিনিধি কাওছার উল্লাহ আরিফ, বগুড়া শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক শিশির মোস্তাফিজ, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের বগুড়া প্রেস ইনচার্জ কারিম উল্লাহ প্রমুখ।

হাপুনিয়া গ্রামে শুভসংঘ স্কুলের উদ্বোধনের পর কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন এ স্কুলের জন্য নির্ধারিত জায়গা পরিদর্শন করেন। ওই জায়গার পাশে থাকা একখণ্ড সরকারি জায়গাও শুভসংঘ স্কুল ব্যবহার করবে বলে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই জায়গাটি হস্তান্তর করা হবে বলে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
কেইউএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।