ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ছাত্রশিবির সন্দেহে পাবিপ্রবির তিন শিক্ষার্থীকে পেটালো ছাত্রলীগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২৩
ছাত্রশিবির সন্দেহে পাবিপ্রবির তিন শিক্ষার্থীকে পেটালো ছাত্রলীগ

পাবনা: ছাত্রশিবির সন্দেহ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) তিন সাধারণ শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।  

বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ স্টাইলে নির্যাতনের পর আহতদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এসময় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে স্থানীয় পুলিশ।

মঙ্গলবার (০৪) দিবাগত রাতে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শাখা ছাত্রলীগ ও পুলিশ কেউ দায় নিচ্ছে না। ছাত্রলীগ ও পাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের দাবি- তাদের কোনো প্রকার নির্যাতন করা হয়নি। সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় তাদের পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয়েছে। সেসময় তাদের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। আর পুলিশের দাবি শিক্ষার্থীদের আহত অবস্থায়ই উদ্ধার করা হয়েছে।

নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা হলেন- লোক প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের গোলাম রহমান জয়, ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আসাদুল ইসলাম এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল হক। তাদের পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আসাদুল ইসলাম ও আজিজুল হককে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে থানায় নেওয়া হয়েছে, আর গোলাম রহমানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে হাসপাতালে পুলিশী পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারাবির নামাজের পর ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে আড্ডা দিচ্ছিল। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মী আপেল, শেহজাদ, তোফিকসহ ১০-১২ জন তাদের কাছে এসে শিবির কিনা জানতে চান। পরে ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শহীদ মিনার থেকে হলে নিয়ে যান। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের তিনটি রুমে নিয়ে স্ট্যাম্প, রড, হকি স্টিক, প্লাসসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নির্যাতন করে। হাতুড়ি, জিআই পাইপ, তালা দিয়েও মারধর করেন। নির্যাতনের একপর্যায়ে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়ার পরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।

আহত তিন শিক্ষার্থী বলেন, ‘তারাবির নামাজ শেষে ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এসময় ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দাড়ি-টুপি থাকায় আমাদের বিভিন্ন কথা বলছিলেন। পরে আমাদের হলে নিয়ে গিয়ে তিন রুমে তিনজনকে আটকে নির্যাতন করে। আমরা শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী। আমাদের অপরাধ আমরা নামাজ-রোজা করি, দাড়ি-টুপি আছে। ’

এ বিষয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বেশ কয়েকজন শিবির কর্মী ক্যাম্পাসে গোপন বৈঠক করছিল। এসময় তাদের আটক করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে আমরা তাদের উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। তাদের কোনো ধরনের মারধর করা হয়নি। সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় তাদের পুলিশে সোর্পদ করা হয়েছে। নির্যাতনের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ যদি ব্যবস্থা নেয়, তাহলে নিতে পারে, আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।

একই সুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা নাজমুল হোসেনের। তিনি বলেন, প্রক্টর ড. কামাল হোসেনের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমি ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। পরে ওই শিক্ষার্থীদের আটক অবস্থায় দেখি। তাদের কাছে থেকে শিবিরের রিপোর্ট বই, ব্যক্তিগত ডায়রি এবং কিছু মোবাইল ও সিম উদ্ধার করা হয়। পুলিশের কাছে সোপর্দের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কোনো নির্যাতন করা হয়নি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ডা. মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার ফোন পেয়ে হলে এসে ওই শিক্ষার্থীদের দেখতে পাই। তারা আমার হলের শিক্ষার্থী নয়, ক্যাম্পাসের বাহিরে থাকে। তারা নিজেরা শিবির বলে স্বীকারোক্তি দিলে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ’

এ বিষয়ে পাবনা পুলিশ সুপার (এসপি) আকবর আলী মুনসী বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর নির্যাতিতরা যদি অভিযোগ দেয়, তাহলেও তদন্ত করে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

এদিকে বুধবার (৫ এপ্রিল) সকালে শাওন নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং (ইউআরপি) বিভাগের ১২তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাকেও শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তুলে ক্যাম্পাসের বাহিরে নিয়ে গেছে বলে একাধিক সূত্র জানায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘শাওন বাসে বাড়ির (ঝিনাইদহ) পথে আছে। তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, সে ঠিক আছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।