জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (সাভার, ঢাকা): দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শিক্ষার্থীদের নাজেহাল অবস্থা। মাস শেষ হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায় পুরো অর্থ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি পিস মুরগির মাংস আর দেড় প্লেট ভাতের জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যয় হতো সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। এছাড়া রুই মাছ ৩০ টাকা, ডিমের তরকারি ১০ টাকা, ভাত প্লেট প্রতি ৩ টাকা, সবজি ১০ টাকা, ভাজি ৫ টাকা, ভুনা ডাল ৫ টাকা ও গরুর মাংস ছিল ৪৫ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১০০ টাকায় ভালোভাবেই খাওয়া যেত।
তবে এখন সেই চিত্র আর নেই। ক্যাম্পাসের খাবারের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, এই সময়ে এসে খাওয়ার জন্য প্রতি শিক্ষার্থীর দৈনিক খরচ আনুমানিক ১৮০-২০০ টাকা। খাবারের দাম বাড়িয়ে মুরগির মাংস ৫০ টাকা, মাছ ৫০ টাকা, গরুর মাংস ১২০ টাকা, ডিম ২০ টাকা ভাত ১০ টাকা, ভাজি ১৫ টাকা ও ডাল ১০ টাকা ধরা হয়েছে।
ফলে খাবার ও আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে একজন শিক্ষার্থীর মাসে খরচ হচ্ছে প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা। নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য এ খরচ চালানো প্রায় অসম্ভব বলা যায়।
শিক্ষার্থীরা এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মিলাতে না পেরে এখন দুই বেলা খেয়ে কটিয়ে দিচ্ছেন। এই ঊর্ধ্বগতির জন্য অনেকেই শিক্ষা জীবন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এখন একটাই চাওয়া তাদের জন্য তিন বেলা মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘এখানে পড়তে আসা অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কঠিন করেছে জীবন। বেড়েছে খাদ্য সামগ্রী ও শিক্ষা সামগ্রীর মূল্য। কিন্তু বাড়েনি আয়। আগে যেখানে দৈনিক খাওয়ার খরচ ১০০-১২০ টাকার মধ্যে মিটে যেত, সেখানে এখন ২০০ টাকা ব্যায় হয়। যা মাস শেষে একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর পক্ষে অনেকটা বড় অংক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিভাগের শিক্ষার্থী সীমান্ত বর্ধন বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির খবর দেখতে পাচ্ছি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের। আগের চেয়ে শিক্ষার্থীদের খরচ বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ। তারা পর্যাপ্ত ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেতে পারছে না। এতে শিক্ষার্থীদের শারীরিক চাহিদা পূরণ হয় না। অনেকেই বাইরের দোকান বাদ দিয়ে হলের ডাইনিংয়ে খাচ্ছে। ডাইনিংয়ের খাবার মানসম্মত হলে শিক্ষার্থীদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো। হলের ডাইনিংয়ে খাবারের মান বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বটতলা এলাকা, প্রধান ফটক, শহীদ সালাম বরকত হল, রফিক-জব্বার হল সংলগ্ন ১০ জন খাবারের দোকানির সঙ্গে কথা বললে তারা সবাই বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেশি। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের খাবারের মূল্য বাড়াতে হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের যে সব শিক্ষার্থী আছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। বর্তমান বাজারমূল্য বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে এসব শিক্ষার্থী। তারা শারীরিক ও মানসিক দুটো সমস্যায় পড়েছে। হলের বাইরে খাবারের দাম অনেক বেশি। একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের সেই খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে হলের ডাইনিংয়ের খাবারে ভর্তুকি বাড়িয়ে মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাদের সদিচ্ছার প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে প্রতিটি হলের প্রাধ্যক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছি যাতে শিক্ষার্থীরা হলে মানসম্মত খাবার পায়। এছাড়াও আমরা এ বিষয়ে সচেতন আছি। আমরা খুব দ্রুতই হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির মিটিং ডেকে এ বিষয়ে কথা বলব। এছাড়াও ক্যাম্পাসের যেসব খাবারের দোকান আছে তারা যেন বাড়তি দাম না রাখে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাদের খাবারের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে মানসম্মত খাবার পায় এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় সচেতন আছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
এমএমজেড