ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা শিক্ষকদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৩
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা শিক্ষকদের ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের (সরকারিকরণ) দাবিতে ১৫ জুলাই থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীদের চলমান লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি।  

শুক্রবার (১৪ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা বিষয়টি জানান।

দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলেও জানান নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদের সঞ্চালনায় সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।  

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে। সহকারী প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল না দেওয়ার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে বছরের পর বছর উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতীকী অনশন, অবস্থান ধর্মঘট, কর্মবিরতিসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বারবার স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

বজলুর রহমান মিয়া বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক ও কর্মচারী টাকা পাওয়ার আগেই অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তাছাড়া কয়েক বছর ধরে কোনো সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে, যা অত্যন্ত অমানবিক। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করা হয়েছিল। কিন্তু অদ্যাবধি কোন প্রতিকার হয়নি।  

তিনি বলেন, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুমোদিত ১৪৬টি অনুচ্ছেদ সংবলিত শিক্ষকদের মর্যাদাবিষয়ক সনদের সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের নির্দেশনা থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ।  ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ কমিয়ে জাতীয় বাজেটের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ অথবা জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ করা হয়েছে। তাই ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ পুরো জাতি আজ চরমভাবে ক্ষুব্ধ।

তিনি আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। এই অবস্থায় দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে দ্রুত জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন, শিক্ষায় বিনিয়োগে ইউনেস্কো আইএলওর সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন এবং সবার জন্য শিক্ষা নেওয়ার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি।  

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরি, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে কোটি কোটি বই বিতরণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন, মেট্রোরেল নির্মাণ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে, শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়ন সেভাবে গুরুত্ব পায়নি।

অন্য বক্তারা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে। শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট করতে হলে দরকার স্মার্ট শিক্ষক। তাই স্মার্ট শিক্ষক পেতে শিক্ষার বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের কোনো বিকল্প নেই।

তারা বলেন, জাতীয়করণের ঘোষণা না দেওয়ায় এবং বাজেটে বিগত অর্থবছরের চেয়েও কম বরাদ্দ রাখায় ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি চলছে। তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস কিংবা যোগাযোগ করা হয়নি।  

১৫ জুলাই থেকে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশের বেসরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চলমান লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে সব শিক্ষক-কর্মচারীকে অংশ নিতে আহ্বান জানান তারা।

এইচএমএস/আরএইচ/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।