টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের গোপালপুরের সাজানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য উদঘাটন করেছিলেন রনি প্রতাপ পালসহ কয়েকজন শিক্ষক।
আর এমনটি করায় সহকারী শিক্ষক রনি প্রতাপকে এক মাসের মধ্যে বিয়ে করার নোটিশ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
মানসিক চাপে রাখা এবং সামাজিকভাবে হেয় করতেই রনি প্রতাপকে এমন নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন ওই বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্থানীয়রা।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নোটিশের প্রতিবাদে আজ (বুধবার) মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন স্থানীয়রা।
প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি ও তাকে নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষক রনি প্রতাপ পালের অভিযোগ, আমি বিদ্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। প্রধান শিক্ষকের অনেক বিল ভাউচারে সমস্যা ধরা পড়ে। উনি নিজেই বিল করেন, নিজেই পাশ করেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন প্রধান শিক্ষক। নতুন সভাপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংক হিসাব পরিচালনার সাথে তাকে যুক্ত করেননি।
এসব দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে যাতে কোনো কথা না বলতে পারেন, এজন্যই প্রধান শিক্ষক তাকে এক মাসের মধ্যে বিয়ে করার নোটিশ দিয়েছেন বলে দাবি রনির।
তিনি বলেন, এরমধ্যে দিয়ে প্রধান শিক্ষক আমাকে মানসিক চাপে রাখতে চেয়েছেন। আমি এই নোটিশ প্রত্যাহার চাই।
প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বিয়ের করার জন্য গত ২৬ জুলাই সহকারী শিক্ষক রনি প্রতাপ পালকে লিখিত নোটিশটি দেন।
ওই নোটিশে বলা হয়, ‘আপনি ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বরে এই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম) পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর অবগত হলাম আপনি অবিবাহিত রয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আপনাকে বার বার মৌখিকভাবে তাগিদ দিয়েছি বিয়ে করতে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, যোগদানের কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও আপনি বিয়ে করেননি। বিদ্যালয়টিতে সহশিক্ষা চালু রয়েছে। অভিভাবকগণ অবিবাহিত শিক্ষক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। সুতরাং বিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থে নোটিশপ্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) কর্ম দিবসের মধ্যে বিয়ে করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে আপনাকে বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া গেল। ’
ওই নোটিশ পাওয়ার পর শিক্ষক রনি প্রতাপ নোটিশের লিখিত জবাব দেন। তিনি জানান, ‘আমার অভিভাবকেরা আমার বিয়ের চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের বিয়ের পাত্রপাত্রী বাছাইয়ে গাত্র বা বর্ণের বিষয় রয়েছে। তাছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শ্রাবণ থেকে কার্তিক পর্যন্ত বিয়ে করাটা শুভ মনে করেন না। সুতরাং পারিবারিক ও ধর্মীয় রীতির কারণে আগামী অগ্রহায়ণ মাসে আমার অভিভাবকেরা আমাকে বিয়ে করাবেন বলে জানিয়েছেন। ’
রনি প্রতাপ গত ৩০ জুলাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে প্রধান শিক্ষকের নোটিশের বিষয়টি জানান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি অবিবাহিত থাকলেও কোনো অভিভাবক বা শিক্ষার্থী কখনো কারো কাছে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। ’
স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, রনি প্রতাপ ভালো শিক্ষক। তাকে নিয়ে কেউ কখনো কোন প্রশ্ন তোলেননি। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের আর্থিক বিষয়গুলো এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। তার অনেক অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। নিজের দুর্নীতি অনিয়ম ধামাচাপা দিতেই রনি প্রতাপকে বিয়ে করার নোটিশ দিয়েছেন তিনি।
সাজানপুর এলাকার ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন বলেন, যে শিক্ষককে বিয়ে করার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে তিনি খুব ভালো মানুষ। কেউ কখনো তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি।
সাজানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর অভিভাবক গৌতম চন্দ্র দাস বলেন, আমার মেয়ে ওই স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম নিজের ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। অন্য শিক্ষকদের গুরুত্ব দেন না।
নোটিশের বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে সহশিক্ষা চলমান রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানে কোনো অবিবাহিত শিক্ষক থাকলে নানা অসুবিধা হতেই পারে। নানা অনৈতিক কিছু ঘটতেও পারে। এজন্য তাকে দ্রুত বিয়ে করার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজনীন সুলতানা জানান, মঙ্গলবার তিনি বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনের গিয়েছিলেন। এই নোটিশ দেওয়ার ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক কোনো উত্তর দিতে পারেননি। প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে কয়েক বছরের। এটি তদন্তের জন্য সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে আহ্বায়ক এবং অন্য দুইটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সদস্য সচিব করে একটি তদন্ত কমিটির প্রস্তাব করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৩
এসএএইচ