জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএস বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রলীগের বাধার মুখে বোর্ডের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেছে।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের উপাচার্য অফিসের প্রধান গেটে অবস্থান নেন শাখা ছাত্রলীগের অর্ধ-শতাধিক নেতাকর্মী। এতে স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং উপাচার্য তার নিজ কক্ষে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এর পরই নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, অনিবার্য কারণবশত আজকের নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নিয়োগ বোর্ডের তারিখ এখনো চূড়ান্ত নয়, চূড়ান্ত হলে এরপর জানিয়ে দেওয়া হবে।
জানা যায়, রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএস বিভাগের একজন শিক্ষক নিয়োগে বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ১০টায়। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে প্রার্থীদের উপাচার্য অফিসের ওয়েটিং রুম থেকে বের করে দেন এবং নিয়োগ বোর্ড যাতে না বসে, সে লক্ষ্যে উপাচার্য অফিসের প্রধান গেটে অবস্থান নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রার্থী জানান, নিয়োগ বোর্ড শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ১০টায়। আমরা যথাসময়ে উপাচার্য অফিসের ওয়েটিং রুমে বসেছিলাম। এরপর শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী এসে বলেন, আজ নিয়োগ বোর্ড বসবে না এবং আমাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলে। তারপর থেকেই আমরা উপাচার্য অফিসের বাইরে প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম।
নিয়োগ বোর্ডে বাধা প্রসঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আশরাফুল আলম গোলদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিরোধী কারো নিয়োগ হোক, তা আমরা চাই না। আমাদের দাবিটি শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কয়েকবার জানানো হলেও তিনি তা আমলে নেননি। উপাচার্য আজ আমাদের অপারগ হয়ে জানিয়েছেন, তিনি চান, তবে অনেকের চাপে তা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরিপন্থী লোকদের শিক্ষক হিসেবে নেবেন না এবং তাদের শিক্ষক হিসেবে নিতে কোনো ধরনের চাপ অনুভব করছেন না- এ বিষয়ে আমরা উপাচার্যের সুস্পষ্ট বক্তব্য চাই।
ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএস বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিভাগের জন্য শিক্ষক নিয়োগ খুবই জরুরি ছিল। একটি শূন্য পদের বিপরীতে ২৩ জন প্রার্থী ছিলেন ছিল। বোর্ড স্থগিত হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় রসায়ন বিভাগের তিন প্রভাষককে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে নবনিযুক্ত প্রভাষকরা বিভাগে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদিয়া আফরিন পাপড়িকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ ঘটনার জের ধরেও রোববার উপাচার্য অফিস অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা।
রসায়ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নবনিযুক্ত তিনজন প্রভাষক ৩৯ ব্যাচ, ৪৩ ব্যাচ ও ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তারা প্রত্যেকেই নিজ বর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। তবে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পাপড়ি স্নাতকে চতুর্থ ও স্নাতকোত্তরে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় নকল করে বহিষ্কৃত হওয়া এবং প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩
আরএইচ