জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ৪ অক্টোবর নগরবাউল খ্যাত শিল্পী জেমসকে আনার ঘোষণা দেন রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদ। কিন্তু আজ সোমবার (৯ অক্টোবর) সাংস্কৃতিক স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং শেষে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মাদ জানান নিরাপত্তাজনিত কারণে জেমসকে আনা হচ্ছে না।
এ সংবাদের পর ৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ট্রেজারার কামালউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে সবার নজর ভিন্ন দিকে নিতেই জেমসকে আনার বিষয়ে গুজব ছড়ানো হয় বলে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষক।
জানা যায়, ৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আয়োজন নিয়ে এক সভা শেষে অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ গণমাধ্যমকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে কনসার্টের আয়োজন থাকবে। কনসার্টে নগরবাউল জেমসকে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ওইদিনই জবির অধ্যাপক থেকে ট্রেজারার নিয়োগের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জবি শিক্ষক সমিতি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসার্টে নগরবাউল জেমসের আনার খবরে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। কিন্তু নগরবাউল ব্যান্ড থেকে জানানো হয়, এমন কোনো প্রস্তাব আমরা পায়নি। কোনো চুক্তিও হয়নি। এরপরই শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়ে।
এ বিষয়ে নগরবাউল ব্যান্ডের বিজনেস ম্যানেজার রুবাইয়াত ঠাকুর রবিন বাংলানিউজকে বলেন, জবিতে আমাদের যাওয়ার কথা ছিল না। এমন কিছু নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।
জেমস জবিতে আসছে সংবাদমাধ্যমে এমন সংবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে কথা না বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন এমন সংবাদ ছড়িয়েছিল সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ট্রেজারারকে জিজ্ঞেস করেন। তারা ভালো বলতে পারবেন।
সাংস্কৃতিক স্ট্যান্ডিং কমিটির কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মাদ বাংলানিউজকে বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে জেমসকে নিয়ে আসার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। আমরা পুলিশসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীদের সাথে কথা বলেছি। সামনে দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন আয়োজনের নিরাপত্তা সংকটে আমরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি।
অন্য কোনো ব্যান্ড দল আনা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের হাতে এখনো কিছুদিন সময় আছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলে কাদের আনা যায় তা নির্দিষ্ট সময়ে জানিয়ে দেবো।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্য হতে কোষাধক্ষ্য নিয়োগের বিষয় শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলন থেকে দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই জেমসকে নিয়ে ভুয়া প্রচারণা চালানো হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটি সংবাদ ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের উৎসবকে ম্লান করে দিয়েছে। নিরাপত্তার কথা তো তাদের আগেই চিন্তা করার কথা ছিল। ঘোষণা দিয়ে এখন জেমসকে না আনতে পারার ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক। ওইদিন শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলন ঢাকতেই এমন সংবাদ ছড়িয়েছে কি না খতিয়ে দেখা দরকার।
তিনি আরও বলেন, ৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ট্রেজারার কামালউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে।
এদিক থেকে সবার নজর ভিন্ন দিকে নিতে জেমস আনার বিষয়ে সংবাদ ছড়ানো হয়েছে কি না তা ভাবার বিষয়। বিষয়টা সন্দেহজনক। জেমস আনার বিষয়টি প্রয়োজনের তাগিদে আইওয়াশ ছিল কি না খতিয়ে দেখা দরকার।
ট্রেজারারের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলন বিষয় ঢাকতে জেমসকে আনার গুজব ছড়ানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তিনি বলেন, অন্য কোনো বিষয় না। জেমসের সঙ্গে আজ যোগাযোগ করার কথা ছিল। চুক্তি হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে আমরা আনতে পারছি না।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২৩
এএটি